Thursday, August 3, 2023

বাংলা উপন্যাস

 বাংলা উপন্যাস: লালসালু                 


উপন্যাস: লালসালু [সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ]. 

০১. কী মিঞা তোমার দিলে কি ময়লা আছে?’- ‘লালসালুউপন্যাসে উক্তিটি কার[চবি ২০১৮-১৯].  উত্তর: মজিদের 
০২. লালসালুউপন্যাসের ইংরেজি অনুবাদ ‘Tree without Roots'- নামক গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল কোন প্রকাশনী কর্তৃক[বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব: ২০১৭-১৮].   উত্তর: Editions du Seuil. 
০৩. ‘সে-মুখ ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য এবং সে-মুখে দুনিয়ার ছায়া নেই।’- ‘লালসালুউপন্যাসে কার সম্পর্কে কথাটি বলা হয়েছে [GST ‘B’ 2023-2024] 
        উত্তর: আমেনা বিবি
০৪. ‘ওটা ছিল নিশানা, আনন্দের আর সুখের।’-এই নিশানাটি কী? [GST ‘B’ 2023-2024] উত্তর: তালগাছ। 
০৫.  জমিতে বীজ বপন এবং ফসল কাটার উপযুক্ত সময়কে বলে- [GST ‘B’ 2023-2024] উত্তর: বতোর। 
০৬.   ‘দু-পা এগিয়ে ওধারে তাকিয়ে সে বলে, বিবি, শিলাবৃষ্টি শুরু হইছে!’-এই উক্তির নেপথ্যে মজিদের কোন বোধ কাজ করেছে[GST ‘B’ 2023-2024] উত্তর: ভয়:  (ক) আনন্দ   (খ) সাহস   (গ) ভয়    (ঘ) বিস্ময়
০৭.   ‘লালসালু’ উপন্যাসে ঝড় এলে হৈ চৈ করা অভ্যাস কার? 
        উত্তর: হাসুনির মায়ের।
০৮.  খ্যাংটা বুড়ির বিলাপ শুনে মন খারাপ হয়েছিল কার? উত্তর: জমিলার।
০৯.   ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটি রচয়িতা কে? উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
১০.   ‘সে যেন খাঁচায় ধরা পড়েছে।’ লালসালু উপন্যাসে যার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? উত্তর: জমিলার।
১১.   আমেনা বিবি মাজারের মধ্যে মূর্ছা গিয়েছিল কেন? 
        উত্তর: শারীরিক দুর্বলতার কারণে।
১২.   হাসুনির মা মজিদের কাছে যায় কেন? উত্তর: নালিশ করতে।
১৩.  মজিদ পূর্বে বাস করত- উত্তর: গারো পাহাড়ে।
১৪.   জমিলাকে দেখে রহিমার মধ্যে কি জেগে উঠেছিল? উত্তর: মাতৃস্নেহ।
১৫.   মজিদের যশ ও খ্যাতির উৎস কোনটি? উত্তর: মাজার।
১৬.   মজিদের প্রতি রহিমার অচঞ্চল আস্থা যার সঙ্গে তুল্য হয়েছে? 
        উত্তর: ধ্রুবতারা।
১৭.   ‘বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ’- লালসালু উপন্যাসে গ্রামবাসী সম্পর্কে লেখকের এই মন্তব্যের তাৎপর্য কি? 
        উত্তর: বিশ্বাস ও যুক্তির দ্বান্দ্বিকতা।
১৮.   ‘সুড়ঙ্গ’ নাটকটি কার লেখা? উত্তর: সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
১৯.   ‘লালসালু’ উপন্যাসে ঢেঙা বুড়ো কার কথায় বিভ্রান্ত হয়? উত্তর: মজিদের।
২০.   মাজারের পাশে দাঁড়িয়ে রহিমা কার জন্য শক্তি প্রার্থনা করে? উত্তর: হাসুনির মার জন্য।

০১.   উত্তরদিকে খানিকটা এগিয়ে মজিদ কোন গ্রামে যায়? 

        উত্তর: মহব্বতনগরে।

০২.   মহব্বতনগরে মজিদের প্রবেশটা কেমন ছিল? উত্তর: নাটকীয়।

০৩.  কোচ বিদ্ধ হয়ে নিহত হয় কে? উত্তর: ছমিরুদ্দিন।

০৪.   ‘কলমা জানো মিঞা’ মজিদ কাকে এ কথা জিজ্ঞেস করেছিল? 

        উত্তর: সাত ছেলের বাপ দুদু মিয়াকে।

০৫.   ‘কলমা জানস না ব্যাটা’? উক্তিটি কার উত্তর: খালেক ব্যাপারীর

০৬.   ‘শরীলে রং ধরছে ক্যান, নিকা করবি নাকি?’ উক্তিটির কার? 

        উত্তর: তাহেরের।

০৭.   আওয়ালপুর পীরের প্রধান মুরিদের নাম কী? উত্তর: মতলুব খাঁ

০৮.   মজিদের বিবি রহিমার কত প্যাচ? উত্তর: চৌদ্দ প্যাচ।

০৯.   ‘সোহবতে সোয়ালে তুরা সোয়ালে কুনাদ’ অর্থ কী? 

        উত্তর: সুসঙ্গ মানুষকে ভালো করে।

১০.   ‘তোমার দাড়ি কই মিঞা’। উক্তিটি কে কাকে করেছে? 

        উত্তর: মজিদ আক্কাসকে।

১১.   ‘শত্রুর আভাস পাওয়া হরিণের চোখের মত সর্তক হয়ে ওঠে কার চোখ’? 

        উত্তর: জমিলার।

১২.   ইউনিয়ন বোর্ডের প্র্রেসিডেন্টের নাম কী? উত্তর: মতলুব খাঁ।

১৩.  মজিদকে প্রথম দেখে জমিলার কী মনে হয়েছিল? উত্তর: বরের বাবা।

১৪.   খালেক ব্যাপারী দ্বিতীয়া স্ত্রীর নাম কী? উত্তর: তানু বিবি।

১৫.   ধলা মিয়া কার ভাই? উত্তর: খালেক ব্যাপারী দ্বিতীয় স্ত্রী বিবির ভাই।

১৬.   ‘মরা মানুষ জিন্দা হয় কেমনে’ উক্তিটি কার? উত্তর: মজিদের।

১৭.   নিরাক পড়া শব্দের অর্থ কী? 

        উত্তর: বাতাসহীন স্তব্ধ গুমোট আবহাওয়া।

১৮.   মজিদকে সবাই কি বলে সম্বোধন করে? উত্তর: মিঞা।

১৯.   মতিগঞ্জের সড়কটা দিয়ে দলে-দলে লোক কোনদিকে চলছে? 

        উত্তর দিকে।

২০.   ‘হুড়কা’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর: খিল।

০১.   তাহের আর কাদের মজিদকে প্রথম কোথায় দেখেছিল? 

        উত্তর: মতিগঞ্জের সড়কে।

০২.   আক্কাস গ্রামে কী প্রতিষ্ঠা করতে চেয়ে ছিল? উত্তর: স্কুল প্রতিষ্ঠা।

০৩.  কে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়? উত্তর: খেতানির মা।

০৪.   কত বছর বয়সে আমেনা বিবির জন্ম হয়েছিল? 

        উত্তর: তের বছর বয়সে।

০৫.   কাদেরের ছোট ভাইয়ের নাম কী? উত্তর: রতন।

০৬.   ‘কুত্তা তোমাকে কামড়ালে তুমিও কি উলটো তাকে কামড়ে দেবে?’ এটি কার উক্তি? উত্তর: আওয়ালপুরের পির সাহেবের উক্তি।

০৭.   ‘বতোর দিন’ শব্দের অর্থ কী? উত্তর: জমিতে বীজ বপন বা ফসল বোনার এবং ফসল কাটার উপযুক্ত সময়।

০৮.   মজিদের প্রতি রহিমার অচঞ্চল আস্থা যার সঙ্গে তুল্য হয়েছে? 

        উত্তর: ধ্রবতারা।

০৯.   ‘বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ’ ‘লালসালু’ উপন্যাসে গ্রামবাসী সম্পর্কে লেখকের এ মন্তব্যের তাৎপয- 

            উত্তর: আত্মবিধ্বংসী ধর্মান্ধতা।

১০.   ‘প্রশ্নটি এই রকম যে মজিদের ইচ্ছা হয় একটা হুঙ্কার ছাড়ে’। মজিদের ক্ষোভ যার আচরণের প্রতিক্রিয়া- উত্তর: জমিলা।

১১.   ‘ধান দিয়া কি হইব, মানুষের জান যদি না থাকে।’ উক্তিটি কার? 

        উত্তর: রহিমার।

১২.   ‘তুমি কী মনে করো মিয়া? তুমি কী মনে করো তোমার বিবি মিছা বদনাম করে? তুমি হলফ কইরা বলতে পারো তোমার দিলে ময়লা নাই? উক্তিটি কার? 

    উত্তর: মজিদের।

১৩.  আক্কাসের বাবার নাম কী? উত্তর: মোদাবেবর।

১৪.   মজিদ কার চোখে ভয় দেখেছে? উত্তর: রহিমার।

১৫.   মহববতনগর গ্রামে মজিদকে প্রথম দেখেছিল কে? 

        উত্তর: তাহের ও কাদের।

১৬.   মজিদ বুড়াকে মাজারে কয় পয়সার সিন্নি দিতে বলেছে? 

        উত্তর: পাঁচপয়সার।

১৭.   মজিদ পূর্বে কোথায় বাস করত? উত্তর: গারো পাহাড়ে।

১৮.   সে যেন খাঁচায় ধরা পড়েছে- ‘লালসালু’ উপন্যাসে কার ধরা পড়ার কথা বলা হয়েছে?

         উত্তর: জমিলার।

১৯.   রহিমার কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করে কে? উত্তর: হাসুনির মা।

২০.   ঝড়ের সময় ঢেঙা বুড়ো কী খেতে চেয়েছিল? উত্তর: চিঁড়া। 

লালসালু-সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ

        শস্যহীন জনবহুল এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের বেরিয়ে পড়বার ব্যাকুলতা ধোঁয়াটে আকাশকে পযর্ন্ত যেন সদাসন্ত্রস্ত করে রাখে। ঘরে কিছু নেই। ভাগাভাগি, লুটালুটি, আর স্থানবিশেষে খুনাখুনি করে সর্বপ্রচেষ্টার শেষ। দৃষ্টি বাইরের পানে, মস্ত নদীটির ওপারে, জেলার বাইরে-প্রদেশেরও; হয়ত-বা আরও দূরে। যারা নলি বানিয়ে ভেসে পড়ে তাদের দৃষ্টি দিগন্তে আটকায় না। জ্বালাময়ী আশা; ঘরে হা-শূন্য মুখ থোবড়ানো নিরাশা বলে তাতে মাত্রাতিরিক্ত প্রখরতা। দূরে তাকিয়ে যাদের চোখে আশা জ্বলে তাদের আর তর সয় না, দিন-মান-ক্ষণের সবুর ফাঁসির শামিল। তাই তারা ছোটে, ছোটে।

    অন্য অঞ্চল থেকে গভীর রাতে যখন ঝিমধরা রেলগাড়ি সর্পিল গতিতে এসে পৌঁছোয় এ-দেশে তখন হঠাৎ আগাগোড়া তার দীর্ঘ দেহে ঝাঁকুনি লাগে, ঝনঝন করে ওঠে লোহালক্কড়। রাতের অন্ধকারে লন্ঠন জ্বালানো ঘুমন্ত কত স্টেশন পেরিয়ে এসে এইখানে নিদ্রাচ্ছন্ন ট্রেনটির সমস্ত চেতনা জেগে সজারুকাঁটা হয়ে ওঠে। তা ছাড়া এদের বহির্মুখ উন্মত্ততা আগুনের হল্কার মতো পুড়িয়ে দেয় দেহ। গেলগাড়ির খুপরিগুলো থেকে আচমকা জেগে-ওঠা যাত্রীরা কেউ-বা ভয় পেয়ে কেউ-বা অপরিসীম কৌতূহলে মুখ বাড়ায়, দেখে আবছা-অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে থাকা লোকদের। কোথায় যাবে তারা? কিসের এত উন্মত্ততা, কিসের এত অধীরতা? এ লাইনে যারা নতুন তারা চেয়ে চেয়ে দেখে। কিন্তু এরা ছোটে। ছোটে আর চিৎকার করে। গাড়ির এ-মাথা থেকে ও-মাথা। এতগুলো খুপরির মধ্যে কোনটাতে চড়লে কপাল ফাটবে-তাই যেন খুঁজে দেখে। ইতিমধ্যে আত্মীয়-স্বজন, জানপছানের লোক হারিয়ে যায়। কারও জামা ছেঁড়ে, কারও টুপিটা অন্যের পায়ের তলায় দুমড়ে যায়। কারও বা আসল জিনিসটা, অর্থাৎ বদনাটা-যা না হলে বিদেশে এক পা চলে না-কী করে আলগোছে হারিয়ে যায়। হারাবে না কেন? দেহটা গেলেই হয়-এমন একটা মনোভাব নিয়ে ছুটোছুটি করলে হারাবেই তো। অনেকের অনেক সময় গলায় ঝোলানো তাবিজের থোকাটা ছাড়া দেহে বিন্দুমাত্র বস্ত্র থাকে না শেষ পযর্ন্ত। তারা অবশ্য বয়সে ছোকড়া। বয়স হলে এরা আর কিছু না হোক শক্ত করে গিরেটা দিতে শেখে। 

     অজগরের মতো দীর্ঘ রেলগাড়ির কিন্তু ধৈর্যের সীমা নেই। তার দেহ ঝনঝন করে লোহালক্কড়ের ঝংকারে, উত্তাপলাগা দেহ কেঁপে ওঠে, কিন্তু হঠাৎ ওঠে ছুটে পালায় না। দেহচ্যুত হয়ে অদূরে অস্পষ্ট আলোয় ইঞ্জিনটা পানি খায়। পানি খায় ঠিক মানুষের মতোই। আর অপেক্ষা করে। দৈর্যের কাঁটা নড়ে না।

    কেনই বা নড়বে? নিশুতি রাতে যে-দেশে এসে পৌছেছে সে-দেশে এখন অন্ধকারে ঢাকা থাকলেও সে জানে যে, তাতে শস্য নেই। বিরান মাঠ, সর-ভাঙ্গা পাড় আর বন্যা-ভাসানো ক্ষেত। নদীগহবরেও জমি কম নেই।

    সত্যি শস্য নেই। যা আছে তা যৎসামান্য। শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি। ভোর বেলায় এত মক্তবে আর্তনাদ ওঠে যে, মনে হয় এটা খোদাতা’লার বিশেষ দেশ। ন্যাংটা ছেলেও আমসিপাড়া পড়ে, গলা ফাটিয়ে মৌলবির বয়স্ক গলাকে ডুবিয়ে সমন্বরে চেঁচিয়ে পড়ে। গোঁফ উঠতে না উঠতেই কোরান হেফজ করা সারা। সঙ্গে সঙ্গে মুখেও কেমন-একটা ভাব জাগে। হাফেজ তারা। বেহেশতে তাদের স্থান নির্দিষ্ট।

    কিন্তু দেশটা কেমন মরার দেশ। শস্যশূন্য। শস্য যা-বা হয় তা জনবহুলতার তুলনায় যৎসামান্য। সেই হচ্ছে মুশকিল। এবং তাই খোদার পথে ঘনিষ্ঠ হয়ে আসার চেতনায় যেমন একটা বিশিষ্ট ভাব ফুটে ওঠে, তেমনি না খেতে পেয়ে চোখে আবার কেমন-একটা ভাব জাগে। শীর্ণদেহ নরম হয়ে ওঠে, আর স্বাভাবিক সরুগলা কেরাতে সময় মধু ছাড়ালেও এদিকে দীনতায় আর অসহায়তায় ক্ষীণতর হয়ে ওঠে। তাতে দিন-কে-দিন ব্যথা-বেদনা আঁকিবুকি কাটে। শীর্ণ চিবুকের আশে-পাশে যে-কটা ফিকে দাড়ি অসংযত দৌর্বল্যে ঝুলে থাকে তাতে মাহাত্ম্য ফোটাতে চায়, কিন্তু ক্ষুধার্ত চোখের তলে চামড়াটে চোয়ালের দীনতা ঘোচে না। কেউ কেউ আর আশা নিয়ে আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ে। বিদেশে গিয়ে পোকায় খাওয়া মস্ত মস্ত কেতাব খতম করে। কিন্তু কেতাবে যে বিদ্যে লেখা তা কোনো-এক বিগত যুগে চড়ায় পড়ে আটকে গেছে। চড়া কেটে সে-বিদ্যেকে এত যুগ অতিক্রম করিয়ে বর্তমান স্রোতের সঙ্গে মিশিয়ে দেবে এমন লোক আবার নেই। অতএব, কেতাবগুলোর বিচিত্র অক্ষরগুলো দুরাস্ত কোনো এক অতীতকালের অরণ্যে আর্তনাদ করে। 

    তবু আশা, কত আশা। খোদাতালার ওপর প্রগাঢ় ভরসা। দিন যায় অন্য এক রঙিন কল্পনায়। কিন্তু ক্ষুধার্ত চোখ বৈরীভাবাপন্ন ব্যক্তিসুখ-উদাসীন দুনিয়ার পানে চেয়ে চেয়ে আরও ক্ষয়ে আসে। খোদার এলেমে বুক ভরে না তলায় পেট শূন্য বলে। মসজিদের বাঁধানো পুকুরপাড়ে চৌকোণ পাথরের খণ্ডটার ওপর বসে শীতল পানিতে অজু বানায়, টুপিটা খুলে তার গহ্বরে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে আবার পরে। কিন্তু শান্তি পায় না। মন থেকে থেকে খাবি খায়, দিগন্তে ঝলসানো রোদের পানে চেয়ে চোখ পুড়ে যায়।

    এরা তাই দেশ ত্যাগ করে। ত্যাগ সদলবদলে বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। নলি বানিয়ে জাহাজের খালাসি হয়ে ভেসে যায়, কারখানার শ্রমিক হয়, বাসাবাড়ির চাকর, দফতরির এটকিনি, ছাপাখানার ম্যাশিনম্যান, টেনারিতে চামড়ার লোক। কেউ মসজিদে ইমাম হয়, কেউ মোয়াজ্জিন। দেশময় কত সহস্র মসজিদ। কিন্তু শহরের মসজিদ, শহরতলীর মসজিদ-এমন কি গ্রামে গ্রামে মসজিদগুলো পযর্ন্ত আগে থেকে দখল হয়ে আছে। শেষে কেউ কেউ দূরদূরান্তে চলে যায়। হয়ত বাহে-মুলুকে, নয়তো মনিদের দেশে। দূর দূর গ্রামে-যে গ্রামে পৌঁছুতে হলে, কত চড়া-পড়া শুল্ক নদী পেরোতে হয়, মোষের গাড়িতে খড়ের গাদায় ঘুমোতে হয় কত রাত। গারো পাড়াড়ে দুর্গম অঞ্চলে কে কবে বাঁশের মসজিদ হরেছিল-সেখানেও।

    এক সরকারি কর্মচারী সেখানে হয়ত একদিন পায়ে বুট এঁটে শিকারে যান। বাইরে বিদেশি পোশাক, মুখমণ্ডলও মসৃণ। কিন্তু আসলে ভেতরে মুসলমান। কেবল নতুন খোলস পরা নব্য শিক্ষিত মুসলমান।

    সে এই দুর্গম অঞ্চলে মিহি কণ্ঠের আজান শুনে চমকে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে তার শিকারের আশাও কিছু দমে যায়। পরে মৌলবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে বনবাসে দিন কাটানোর ফলে লোকটার চোখেমুখে নিঃসঙ্গতার বন্য শূন্যতা।

    -আপনার দৌলতখানা? শিকারি বলে। -আপনার নাম? নাম শুনে মৌলবির চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তা ছাড়া মুহূর্তে খোদার দুনিয়া চোখের সামনে আলোকিত হয়ে ওঠে!

    শিকারিও পাল্টা প্রশ্ন করে। বাড়ির কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ মৌলবির মনে স্মৃতি জাগে। কিন্তু সংযত হয়ে বলে, এধারের লোকদের মধ্যে খোদাতালার আলোর অভাব। লোকগুলো অশিক্ষিত কাফের। তাই এদের মধ্যে আলো ছড়াতে এসেছে। বলে না যে, দেশে শস্য নেই, দেশে নিরন্তর টানাটানি, মরার খরা।  

    দূর জঙ্গলে বাঘ ডাকে। ক্বচিৎ কখনো হাতিও দাবড়ে কুঁদে নেমে আসে। কিন্তু দিনে পাঁচ-সাতবার দীর্ঘ শালগাছ ছাড়িয়ে একটা ক্ষীণগলা জাগে-মৌলবির গলা। বুনো ভারী হাওয়ায় তার হাল্কা ক-গাছি দাড়ি ওড়ে এবং গভীর রাতে হয়ত চোখের কোণটা চকচক করে ওঠে বাড়ির ভিটেটার জন্যে।

    কিন্তু সেটা শিকারির কল্পনা। আস্তানায় ফিরে এসে বন্দুকের নল সাফ করতে করতে শিকারি কল্পনা করে সে-কথা। তবে নতুন এক আলোর ঝলকে মৌলবির চোখ যে দীপ্ত হয়ে ওঠে সে কথা জানে না; ভাবতেও পারে না হয়ত।

    একদিন শ্রাবণের শেষাশেষি নিরাক পড়েছে। হাওয়াশূন্য স্তব্ধতায়-মাঠপ্রান্তর আর বিস্তৃত ধানক্ষেত নিথর, কোথাও একটু কম্পন নেই। আকাশে মেঘ নেই। তামাটে নীলাভ রং দিগন্ত পযর্ন্ত স্থির হয়ে আছে।

    এমনি দিনে লোকেরা ধানক্ষেত্রে নৌকা নিয়ে বেরোয়। ডিঙ্গিতে দু-দুজন করে, সঙ্গে কোঁচ-জুতি। নিস্পন্দ ধান-ক্ষেতে প্রগাঢ় নিঃশব্দতা। কোথাও একটা কাক আর্তনাদ করে উঠলে মনে হয় আকাশটা বুঝি চটের মতো চিরে গেল। অতি সন্তর্পণে ধানের ফাঁকে ফাঁকে তারা নৌকা চালায়; ঢেউ হয় না, শব্দ হয় না। গলুই-এ মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে একজন-চোখ ধারালো দৃষ্টি। ধানের ফাঁকে ফাঁকে সাপের সর্পিল সূক্ষ্মগতিতে সে-দৃষ্টি এঁকেবেঁকে চলে।

    বিস্তৃত ধানক্ষেতের এক প্রান্তে তাহের-কাদেরও আছে। তাহের দাঁড়িয়ে সামনে-চোখে তার তেমনি শিকারির সূচাগ্র একাগ্রতা। পেছনে তেমনি মূর্তির মতো বসে কাদের ভাইয়ের ইশারার অপেক্ষায় থাকে। দাঁড় বাইছে, কিন্তু এমন কৌশলে যে, মনে হয় নিচে পানি নয়, তুলো।

    হাঠাৎ তাদের ঈষৎ কেঁপে ওঠে মুহূর্তে শক্ত হয়ে যায়। সামনের পানে চেয়ে থেকেই পেছনে আঙুল দিয়ে ইশারা করে। সামনে, বাঁয়ে। একটু বাঁয়ে ক-টা শিষ নড়ছে-নিরাকপড়া বিস্তৃত ধানক্ষেতে কেমন স্পষ্ট দেখায় সে-নড়া। আরও বাঁয়ে। সাবধান, আস্তে। তাহেরের আঙুল অদ্ভূত ক্ষিপ্রতায় এসব নির্দেশই দেয়। 

    ততক্ষণে সে পাশ থেকে আলগোছে কোঁচটা তুলে নিয়েছে। নিতে একটুও শব্দ হয়নি। হয়নি তার প্রমাণ, ধানের শিষ এখনো ওখানে নড়ছে। তারপর কয়েকটা নিঃশ্বাসরুদ্ধ করা মুহূর্ত। দূরে যে-কটা নৌকা ধান-ক্ষেতের ফাঁকে ফাঁকে এমনি নিঃশব্দে ভাসছিল, সেগুলো থেমে যায়। লোকরা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ধনুকের মতো টান-হয়ে-ওঠা তাহেরের কালো দেহটির পানে। তারপর দেখে, হঠাৎ বিদ্যুাৎ চমকের মতো সেই কালো দেহের ঊর্ধ্বাশ কেঁপে উঠল, তীরের মতো বেরিয়ে গেল একটা কোঁচ। সা-ঝাক্।

    একটু পরে একটা বৃহৎ রুই মুখ হা-করে ভেসে ওঠে। আবার নৌকা চলে। ধীরে ধীরে, সন্তর্পণে।

    একসময় ঘুরতে ঘুরতে তাহেরদের নৌকা মতিগঞ্জের সড়কটার কাছে এসে পড়ে। কাদের পেছনে বসে তেমনি নিষ্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে তাহেরের পানে তার আঙ্গুলের ইশারার জন্য। হাঠৎ এক সময় দেখে, তাহের সড়কের পানে চেয়ে কী দেখছে, চোখে বিস্ময়ের ভাব। সেও সেদিকে তাকায়। দেখে, মতিগঞ্জের সড়কের ওপরেই একটি অপরিচিত লোক আকাশের পানে হাত তুলে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, শীর্ণ মুখে ক-গাছি দাড়ি, চোখ নিমীলিত। মুহূর্তের পর মুহূর্ত কাটে, লোকটি চেতনা নেই। নিরাকপড়া আকাশ যেন তাকে পাথরের মূর্তিতে বূপান্তরিত করেছে।

    কাদের আর তাহের অবাক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখে। মাছকে সতর্ক করে দেবার ভয়ে কথা হয় না, কিন্তু পাশেই একবার ধানের শিষ স্পষ্টভাবে নড়ে ওঠে, ঈষৎ আওয়াজও হয়-সেদিকে দৃষ্টি নেই।

    একসময়ে লোকটি মোনাজাত শেষ করে। কিছুক্ষণ কী ভেবে ঝট করে পাশে নামিয়ে রাখা পুঁটুলিটা তুলে নেয়। তারপর বড় বড় পা ফেলে উত্তর দিকে হাঁটতে থাকে। উত্তর দিকে খানিকটা এগিয়ে মহব্বতনগর গ্রাম। তাদের ও কাদেরের বাড়ি সেখানে। 

    অপরাহ্ণের দিকে মাছ নিয়ে দু-ভাই বাড়ি ফিরে খালেক ব্যাপারীর ঘরে কেমন একটা জটলা। সেখানে গ্রামের লোকেরা আছে, তাদের বাপও আছে। সকলের কেমন গম্ভীর ভাব, সবার মুখ চিন্তায় নত। ভেতরে উঁকি মেরে দেখে, একটু আলগা হয়ে বসে আছে সেই লোকটা-নৌকা থেকে মতিগঞ্জের সড়কের ওপর তখন যাকে মোনাজাত করতে দেখেছিল। রোগা লোক, বয়সের ধারে যেন চোয়াল দুটে উজ্জ্বল। চোখ বুজে আছে। কোটরাগত নিমীলিত সেই চোখে একটুও কম্পন নেই।

    এভাবেই মজিদের প্রবেশ হলো মহব্বতনগর গ্রামে। প্রবেশটা নাটকীয় হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু গ্রামের লোকেরা নাটকেরই পক্ষপাতি। সরাসরি মতিগঞ্জের সড়ক দিয়ে যে গ্রামে এসে ঢুকবে তার চেয়ে বেশি পছন্দ হবে তাকে যে বিলটার বড় অশ্বথু গাছ থেকে নে আসবে। মজিদের আগমনটা তেমনি চমকপ্রদ। চমকপ্রদ এই জন্যে যে, তার আগমন, মুহূর্তে সমগ্র গ্রামকে চমকে দেয়। শুধু তাই নয়, গ্রামবাসীর, নির্বুদ্ধিতা সম্পর্কে তাদের সচেতন করে দেয়, অনুশোচনায় জর্জরিত করে দেয় তাদের অন্তর।

    শীর্ণ লোকটি চিৎকার করে গালাগাল করে লোকদের। খালেক ব্যাপারীমাতব্বর রেহান আলি ছিল। জোয়ান মদ্দ কালু মতি, তারও ছিল। কিন্তু লজ্জায় তাদের মাথা হেঁট। নবাগত লোকটির কোটরাগত চোখে আগুন।

    -আপনারা জাহেল, বে-এলেম, আনপাড়হ্। মোদাচ্ছের পিরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলি রাখছেন?

    গ্রাম থেকে একটু বাইরে একটা বৃহৎ বাঁশঝাড়। মোটাসোটা তার গুঁড়ি। সেই বাঁশঝাড়ের ক-গজ ওধারে একটা পরিত্যক্ত পুকুরের পাশে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে আছে গাছপালা। যেন একদিন কার বাগান ছিল সেখানে। তারই একধারে টালখাওয়া ভাঙা এক প্রাচীন কবর। ছোট ছোট ইটগুলো বিবর্ণ শ্যাওলায় সবুজ, যুগযুগের হাওয়ায় কালচে। ভেতরে সুড়ঙ্গের মতো। শেয়ালের বাসা হয়ত। ওরা কী করে জানবে যে, ওটা মোদাচ্ছের পিরের মাজার?

    সভায় অশীতিপর বৃদ্ধ সলেমনের বাপও ছিল। হাঁপানির রোগী। সে দম খিঁচে লজ্জায় নত করে রাখে চোখ।

    -আমি ছিলাম গারো পাহাড়ে, মধুপুর গড় থেকে তিন দিনের পথ।

    -মজিদ বলে। বলে যে, সেখানে সুখে শান্তিতেই ছিল। গোলাভরা ধান, গরু-ছাগল। তবে সেখানকার মানুষরা কিন্তু অশিক্ষিত, বর্বর। তাদের মধ্যে কিঞ্চিৎ খোদার আলো ছড়াবার জন্যেই অমন বিদেশ-বিভুঁইয়ে সে বসবাস করছিল। তারা বর্বর হলে কী হবে, দিল তাদের সাচ্চা, খাঁটি সোনার মতো। খোদা-রসুলের ডাক একবার দিলে পৌঁছে দিতে পারলে তারা বেচাইন হয়ে যায়। তা ছাড়া তাদের খাতির-যত্ন ও স্নেহ-মমতার মধ্যে বেশ দিন কাটছিল; কিন্তু সে একদিন স্বপ্ন দেখে। সে-স্বপ্নই তাকে নিয়ে এসেছে এত দূরে। মধুপুর গড় থেকে তিন দিনের পথ সে দুর্গম অঞ্চলে মজিদ যে বাড়ি গড়ে তুলেছিল তা নিমেষের মধ্যে ভেঙ্গে ছুটে চলে এসেছে।

    লোকেরা ইতিমধ্যে বার-কয়েক শুনেছে সে-কথা, তবু আবার উৎকর্ণ হয়ে ওঠে।

    -উনি একদিন স্বপ্নে ডাকি বললেন---

    বলতে বলতে মজিদের কোটরাগত ক্ষুদ্র চোখ দুটো পানিতে ছাপিয়ে ওঠে।

   গ্রামের লোকগুলি ইদানীং অবস্থাপন্ন হয়ে উঠেছে। জোতজমি করেছে, বাড়ি-ঘর করে গরুছাগল আর মেয়েমানুষ পুষে চড়াই-উতরাই ভাব ছেড়ে ধীরস্থির হয়ে উঠেছে, মুখে চিকনাই হয়েছে। কিন্তু খোদার দিকে তাদের নজর কম। এখানে ধানক্ষেতে হাওয়া গান তোলে বটে কিন্তু মুসল্লিদের গলা আকাশে ভাসে না। গ্রামের প্রান্তে সেই জঙ্গলের মধ্যে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বুকে ঝোলানো তামার দাঁত-খিলাল দিয়ে দাঁতের গহবর খোঁচাতে খোঁচাতে মজিদ সেদিন সে-কথা স্পষ্ট বুঝেছিল। সঙ্গে সঙ্গে একথাও বুঝেছিল যে, দুনিয়ায় সচ্ছলভাবে দু-বেলা খেয়ে বাঁচবার জন্যে যে-খেলা খেলতে যাচ্ছে সে-খেলা সাংঘাতিক। মনে সন্দেহ ছিল, ভয়ও ছিল। কিন্তু জমায়েতের আধোবদন চেহারা দেখে পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল অন্তর। হাঁপানি-রোগগ্রস্ত অশীতিপর বৃদ্ধের চোখের পানে চেয়েও তাতে লজ্জা ছাড়া কিছু দেখেনি।

    জঙ্গল সাফ হয়ে গেল। ইট-সুরকি নিয়ে সেই প্রাচীন কবর সদ্যমৃত কোনো মানুষের কবরের মতো নতুন দেহ ধারণ করল। ঝালরওয়ালা সালু দ্বারা আবৃত হলো মাছের পিঠের মতো সে কবর। আগরবাতি গন্ধ ছড়াতে লাগল, মোমবাতি জ্বলতে লাগল রাতদিন। গাছপালায় ঢাকা স্থানটি আগে স্যাঁতসেঁতে ছিল, এখন রোদ পড়ে খটখটে হয়ে উঠল; হাওয়ারও ভ্যাপসা গন্ধ খড়ের মতো শুল্ক হয়ে উঠল।

    এ-গ্রামে সে-গ্রাম থেকে লোকরা আসতে লাগল। তাদের মর্মন্তুদ কান্না, অশ্রূসজল কৃতজ্ঞতা, আশার কথা, ব্যর্থতার কথা-সালুতে আবৃত মাছের পিঠের মতো অজ্ঞাত ব্যক্তির সেই কবরের কোলে ব্যক্ত হতে লাগল দিনের পর দিন। তার সঙ্গে পয়সা-ঝকঝক পয়সা, ঘষা পয়সা, সিকি-দুয়ারি-আধুলি, সাচ্চা টাকা, নকল টাকা ছড়াছড়ি যেতে লাগল।

   ক্রমে ক্রমে মজিদের ঘরবাড়ি উঠল। বাহির ঘর, গোয়াল ঘর, আওলা ঘর। জমি হলো, গৃহস্থালি হলো। নিরাকপড়া শ্রাবণের সেই হাওয়া-শূন্য স্তব্ধ দিনে জীবনের যে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছিল, মাছের পিঠের মতো সালু কাপড়ে আবৃত নশ্বর জীবনের প্রতীকটির পাশে সে জীবন পদে পদে এগিয়ে চললো। হয়ত সামনের দিকে, হয়ত কোথাও নয়। সে-কথা ভেবে দেখবার লোক সে নয়। বতোর দিনে মগরা-মগরা ধান আসে ঘরে, তাই যথেষ্ট। তথাকথিত মাজারের পানে চেয়ে ক্বচিৎ কখনো সে যে ভাবিত না হয় তা নয়। কিন্তু তারও যে বাঁচবার অধিকার আছে সেই কথাটাই সে সাময়িক চিন্তার মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে। তা ছাড়া গারো পাহাড়ের শ্রমক্লান্ত হাড় বের করা দিনের কথা স্মরণ হলে সে শিউরে ওঠে। ভাবে, খোদার বান্দা সে নির্বোধ ও জীবনের জন্য অন্ধ। তার ভুলভ্রান্তি তিনি মাফ করে দেবেন। তাঁর করুণা অপার, সীমাহীন।

    একদিন মজিদ বিয়েও করে। অনেক দিন থেকে আলি-ঝালি একটি চওড়া বেওয়া মেয়েকে দেখছিল।

    শেষে সেই মেয়েলোকটিই বিবি হয়ে তার ঘরে এল। নাম তার রহিমা। সত্যি সে লম্বা-চাওড়া মানুষ! হাড়-চওড়া মাংসল দেহ। শীঘ্র দেখা গেল, তার শক্তিও কম নয়। বড় বড় হাঁড়ি সে অনায়াসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তুলে নিয়ে যায়, গোঁয়ার ধামড়া গাইকেও স্বচ্ছন্দে গোয়াল থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসে। হাঁটে যখন, মাটিতে আওয়াজ হয়, কথা হয় যখন, মাঠ থেকে শোনা যায় গলা।

    তবে তার শক্তি, তার চওড়া দেহ বাইরের খোলস মাত্র। আসলে সে ঠাণ্ডা, ভীতু মানুষ। দশ কথায় রা নেই, রক্তে রাগ নেই। মজিদের প্রতি তার সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভয়। শীর্ণ মানুষটির পেছনে মাছের পিঠের মতো মাজারটির বৃহৎ ছায়া দেখে।

    ও যখন উঠানে হাঁটে তখন মজিদ চেয়ে চেয়ে দেখে। তারপর মধুর হেসে আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বলে,

    -অমন করি হাঁটতে নাই।

    থমকে গিয়ে রহিমা তার দিকে তাকায়।

    মজিদ বলে,

    -অমন করে হাঁটতে নাই বিবি, মাটি-এ গোস্বা করে।

    এই মাটিতেই তো একদিন ফিরি যাইবা-থেকে আবার বলে, মাটিরে কষ্ট দেওনা গুনাহ।

    এ-কথা আগেও শুনেছে রহিমা। মুরুব্বিরা বলেছে, বাড়ির আত্মীয়রা বলেছে। মজিদের কথার বাইরে সালু কাপড়ে আবৃত মাজারটির কথা স্মরণ হয়।

    মজিদ নীরবে চেয়ে চেয়ে দেখে। দেখে রহিমার চোখে ভয়।

    মধুরভাবে হেসে আবার বলে,

    -অমন করি কখনো হাঁটিও না। কবরে আজাব হইবে।

   শক্তিমত্তা নারীর উজ্জ্বল পরিস্কার চোখে ঘনায়মান ভয়ের ছায়া দেখে মজিদ খুশি হয়। তারপর বাইরে গিয়ে কোরান তেলাওয়াত শুরু হয়।গলা ভালো তার, পড়বার ভঙ্গিও মধুর। একটা চমৎকার সুরে সারা বাড়ি ভরে যায়। যেন হাস্নাহেনার মিস্টি মধুর গন্ধ ছড়ায়।

   কাজ করতে করতে রহিমা থমকে যায়; কান পেতে শোনে। খোদাতা’আলার রহস্যময় দিগন্ত তার অন্তরে যেন বিদ্যুতের মতো থেকে থেকে ঝিলিক দিয়ে ওঠে। একটি অব্যক্ত ভীতিও ঘনিয়ে আসে মনে। সে খোদাকে ভয় পায়, মাজারকে ভয় পায়, স্বামী মজিদকেও ভয় পায়।

   গ্রামের লোকেরা যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ। তাগড়া-তাগড়া দেহ-চেনে জমি আর ধান, চেনে পেট। খোদার কথা নেই। স্মরণ করিয়ে দিলে আছে, নচেৎ ভুল মেরে থাকে। জমির জন্যে প্রাণ। সে জমিতে বর্ষণহীন খরার দিনে ফাটল ধরলে তখন কেবল স্মরণ হয় খোদাকে।

    কিন্তু জমি এধারে উর্বর, চারা ছড়িয়েছে কি সোনা ফলবে। মানুষরাও পরিশ্রম করে, জমিও সে শ্রমের সম্মান দেয়। দেয় তো বুক উজাড় করে দেয়।

    মাঠে গিয়ে মানুষ মেঠো হয়ে ওঠে। কখনো ঘরোয়া হিংসা-বিদ্বেষের জন্যে, বা আত্মমর্যাদার ভুয়ো ঝাণ্ডা উঁচিয়ে রাখবার জন্যে তারা জমিকে দাবার ছকের মতো ভাগ করে ফেলে। সে-জমিকেই আবার রক্ত দিয়ে রক্ষা করতে দ্বিধা করে না। হয়ত দুনিয়ার দূষিত আবহাওয়ার মধ্যে তারা বর্বরতার নীচতায় নেমে আসে, কিন্তু যখন জমির গন্ধ নাকে লাগে, মাটির এলো খাবড়া দলাগুলোর পানে চেয়ে আপন রক্তমাংসের কথা স্মরণ হয়, তখন ভুলে যায় সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ। সিপাইর খণ্ডিত ছিন্ন দেহের একতাল অর্থহীন মাংসের মতো জমিও তখন প্রাণের চাইতে বড় হয়ে ওঠে। খাবলা খাবলা রুঠাজমি, ডোবাজমি, কাদাজমি-ফাটলধরা জ্যৈষ্ঠের জমি-সব জমি একান্ত আপন; কোনটার প্রতি অবহেলা নেই। যেমন সুস্থ মুমূর্ষু বা জরাজর্জর আত্মীয় জনের প্রতি দৃষ্টিভেদ থাকে না মানুষের। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেই তারা খাটে। হয়ত কাঠফাটা রোদ, হয়ত মুষলধারে বৃষ্টি-তারা পরিশ্রম করে চলে। অগ্রহায়ণের শীত খোলা মাঠে হাড় কাঁপায়, রোদ পানি-খাওয়া মোটা কর্কশ ত্বকের ডাসা লোমগুলো পযর্ন্ত জলো শীতল হাওয়ায় খাড়া হয়ে ওঠে-তবু কোমর পরিমাণ পানিতে ডুবে থাকা মাঠ সাফ করে। সযত্নে, সস্নেহে সাফ করে যত জঞ্জাল। কিন্তু জঞ্জালের আবার শেষ নেই। কার্তিকে পানি সরে এলেও কচুরিপানা জড়িয়ে জড়িয়ে থাকে জমিতে। তখন আবার দল বেঁধে লেগে যায় তারা। ভাগ্যকে ঘষে সাফ করবার উপায় নেই, কিন্তু যে-জমি জীবন সে-জমিকে জঞ্জালমুক্ত করে ফসলের জন্যে তৈরি করে। তার জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রমকে ভয় নেই। এদিকে সূর্য ক্রমশ দূরপথ ভ্রমণে বেরোয়, ফিমিয়ে আসে তাপ, মেঘশূন্য আকাশের জমাট ঢালা নীলিমার মধ্যে শুকিয়ে ওঠে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ। তখন শুরু হয় আরেক দফা পরিশ্রম। রাত নেই দিন নেই হাল দেয়। তারপর ছড়ায় চারা-ছড়াবার সময় না-তাকায় দিগন্তের পানে, না-স্মরণ করে খোদাকে। এবং খোদাকে স্মরণ করে না বলেই হয়ত চারা ছড়ানো জমি শুকিয়ে কঠিন হতে থাকে।  


১। সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ জন্মগ্রহন করেন- চট্রগ্রামে।
২। সৈয়দ ওয়াল্লিউল্লাহর উপন্যাসটি ফরাসি ও ইংরেজী ভাষায় অনুদিত হয়- লালসালু ।
৩। সাংবাদিক হিসেবে- কর্মজীবন শুরু করেন সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ
৪। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ মৃত্যুবরণ করেন- ১৯৭১ খ্রিষ্ট্রাব্দ।
৫।বাংলাদেশের কথাসাহিত্যকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পথিকৃৎ ছিলেন- সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
৬। ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়- ১৯৬৮ সালে।
৭। ‘নয়নচতারা’ গল্পগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়- ১৯৪৬ সালে।
৮।‘লালসালু’ উপন্যাস অনুযায়ী কী না হলে বিদেশে এক পাও চলে না- বদনা।
৯। নোয়াখালি অঞ্চলে শস্যের চেয়ে বেশি- টুপি।
১০। ‘কিন্তু দেশটা কেমন মরার দেশ’ – বলা হয়েছে- শস্যহীন বলে।
১১।মজিদের শারীরিক গড়ন-শীর্ণকায়।
১২। মোদাচ্ছের পীরের কবর আবিষ্কার করায় মজিদ উম্মোচিত হয়েছে- মিথ্যাচার চরিত্রে।
১৩। বিভিন্ন গ্রাম থেকে মহব্বতনগরে মানেুষ আসতে লাগে- মাজারে মানত করতে।
১৪। মজিদ ভয় দেখেছে- রহিমার চোখে।
১৫। দুদু মিঞার মুখে লজ্জার হাসি আসে –কলমা জানে না তাই।
১৬। মজিদের শক্তির মূল উৎস- মাজার।
১৭। মজিদের সঙ্গে গ্রামবাসীর যোগসূত্রকারী চরিত্র হিসেবে সাদৃশ্যপূর্ণ হল- রহিমার্ চরিত্রটি |
১৮। ঢেঙা বুড়োর হাতে মার খেয়ে হাসুনির মা গিয়েছিল- মজিদের বাড়িতে।
১৯। ঝড় এলে হাসুনির মায়ের অভ্যাস ছিল- হৈ চৈ করা।
২০। মজিদ হাসুনির মার কাছ থেকে চেয়েছিল- তামাক।
২১। মহিদ হাসুনির মাকে শাড়ি কিনে দিয়েছিল- বেগুনি রঙ্গের।
২২। মজিদের গড়া মাজারে লোকজনের আসা কমে যায়- অন্য পীরদের আধিপত্য।
২৩।‘পাথর এবার হঠাৎ নড়ে’।– পাথর বলতে বোঝানো হয়েছে- মজিদকে।
২৪। আমেনা বিবি তার স্বামীকে পানিপড়া আনতে বলেছিল – মা হওয়ার আশায়।
২৫। মজিদের মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশটা ছিল- নাটকীয়।
২৬। জমিলা আমাদের সমাজব্যবস্থার যে অসংগতির শিকার- বাল্যবিবাহ।
২৭। খোদার অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাজারে খ্যাংটা বুড়ি নালিশ করেছিল- ছেলের মৃত্যুতে।
২৮।‘লালসালু’ উপন্যাসে যে পাড়ার উৎসবের কথা বর্ণিত আছে-ডোমপাড়া।
২৯। যার বিলাপ শুনে জমিলার মন খারাপ হয়েছিল- খ্যাংটা বুড়ির।
৩০।মজিদের বাড়িতে জিকিরের জন্য যে শিরনি রান্না চলছিল তার তদারকির দায়িত্ব ছিল- রহিমা ও জমিলার |
৩১। জিকির করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল- আমেনা বিবি।
৩২। এশার নামাজ পড়ে মজিদ মাজারে কিসের আওয়াজ শুনেছিল বলে প্রকাশ করে- সিংহের।
৩৩। মজিদের মুখে থুথু ফেলেছিল- জমিলা।
৩৪। ‘লালসালু’ উপন্যাসে চৌকাঠে বসলে ঘরে কী আসে বলে উল্লেখ্য রয়েছে- বালা।
৩৫। সহজ প্রাণধর্মের উজ্জ্বল প্রতীক -জমিলা।
৩৬। গ্রামবাসীর অন্তর জর্জরিত হয়ে ওঠে - অনুশোচনায়।
৩৭। মজিদের শক্তি প্রতিফলিত হয়- গ্রামবাসীর ওপর।
৩৮। বুড়ো, হাসুনির মাকে বেধড়ক প্রহার করে- ঘরের কথা মজিদকে বলায়।
৩৯। মজিদকে শিকড়গাড়া বৃক্ষ করতে সক্রিয় ছিল- ধর্ম।
৪০। মজিদ মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল- মতিগঞ্জের সড়কের ওপর ।
৪১। আমেনা বিবির প্রতি মজিদের যে দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ পেয়েছে- লালসা।
৪২। খালেক ব্যাপারীর সামনে বসে কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করে- ধলা মিঞা।
৪৩। শত্রুর আভাস পাওয়া হরিণের চোখের মতোই সতর্ক হয়ে ওঠে – জমিলার চোখ ।
৪৪। ‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের মুখে জমিলার থুথু নিক্ষেপে প্রকাশ পেয়েছে- ক্রোধ।
৪৫। মজিদ পূর্বে যেখানে বাস করত- গারো পাহাড়ে।
৪৬। মজিদের দুদু মিয়াকে শাসনের মধ্যে নিহিত- আধিপত্য বিস্তার।
৪৭। রহিমার কাছে নিজের মৃত্যু কামনা করে- জমিলা।
৪৮। প্রথম যৌবনে মজিদ যেমন বৌ এর স্বপ্ন দেখতো-জমিলার মতো।
৪৯। ঢেঙ্গা বুড়োর বিচারে মজিদ যে সূরা পাঠ করেছিল- সূরা আন-নূর।
৫০। ‘ বতর’ শব্দের অর্থ- ফসল কাটার উপযুক্ত সময়।
৫১। ‘ওনারে কইবেন, আমার যেন মওত হয়।’ আর্জিটি করেছিল- হাসুনির মা।
৫২। মাঠের ধান নষ্ট হয়ে যায়- শিলা বৃষ্টি হলে।
৫৩। ‘শস্যের চেয়ে টুটি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি’ বলতে বোঝানো হয়েছে- ধর্মীয় গোঁড়ামী।
৫৪। গ্রামের লোকেরা যেন রহিমারই- অন্য সংস্করণ।
৫৫। বিশ্বাসের পাথরে যেন- খোদাই করা চোখ।
৫৬। ঘরের ম্লান আলোয় কবরের সেই অনাবৃত অংশটা - মৃত মানুষের খোলা চোখের মতো দেখায়।
৫৭। আমেনা বিবির বিয়ে হয়েছিল – ১৩ বছর বয়সে।
৫৮। মোনাজাত শেষে মজিদ পা ফেলছিল – উত্তর দিকে।
৫৯। আমেনা বিবি ও রহিমার মধ্যে মিল রয়েছে – নিঃসন্তানের দিকটা।
৬০। ঘুমকাতুরে- জমিলা।
৬১। খালেক ব্যাপারীর মতে আক্কাস দাড়ি রাখেনি- ইংরেজি পড়েছে বলে।
৬২। গ্রামে হিড়িত পড়েছে- মসজিদ স্থাপনের।
৬৩। আমেনা বিবির আনন্দ আর সুখের নিশানা- থোতা মুখের তালগাছ।
৬৪। আওয়ালপুরের পীরের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে- ধর্মব্যবসা।
৬৫।আওয়ালপুরের পীর আছরের সময় যে নামাজ পেয়েছে- জোহর।
৬৬। মজিদ হাসপাতালে গিয়েছিল- সমবেদনা প্রকাশ করতে।
৬৭। আওয়ালপুরের পীরের প্রতি আমেনার প্রকাশ পেয়েছে- অন্ধবিশ্বাস।
৬৮। খালেক ব্যাপারি সঙ্গে ধলা মিয়ার সম্পর্ক ছিল- শ্যালক।
৬৯। ধলা মিয়াকে ব্যাপারী আওয়ালপুরে যেতে বলেছিল- পানিপড়া আনতে।
৭০। ধলা মিয়ার দেবংশি তেঁতুল গাছকে ভয় পাওয়ার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে - কুসংস্কার বিশ্বাস।
৭১। মজিদ বারবার ধলা মিয়াকে আওয়ালপুরে যেতে বলায় প্রকাশ পেয়েছে- দৃঢ়তা।
৭২। আওয়ালপুরের পীরকে মজিদ আখ্যা দিয়েছে - ইবলিশ।
৭৩। খালেক ব্যাপারী মজিদকে ভায় পায় -ধর্মভীতির কারণে।
৭৪। ‘আমেনা’ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- নিঃসন্তান।
৭৫। ঢেঙ্গা বুড়োর স্ত্রীর জানাজা পাড়ানোর কথা ছিল- মোল্লা শেখের।
৭৬। “তানি যে খোদার মানুষ” উক্তিটি হল - রহিমার।
৭৭। উঠানোর পথটুকু পাড়ি দিতে আমেনা বিবি পরিপ্রান্ত বোধ করে- অসুস্থাতায়।
৭৮। আমেনা বিবি মজিদের কাছে চড়ে গিয়েছিল- পালকি।
৭৯। আমেনা বিবিকে পালকি থেকে নামিয়ে মজিদ যেতে বলেছিলেন- মাজারে।
৮০। মজিদ বার বার আমেনা বিবির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল- রূপের মোহে।
৮১। মজিদের সামনে খালেক ব্যাপারী অসহায় – ধর্মভীতির কারণে।
৮২। আমেনা বিবি মাজারে পাক শুরু করেছিল- ডান দিক থেকে।
৮৩। রহিমা মাজারে আমেনা বিবির দৃশ্যগুলো দেখেছিল- বেড়ার ফুটো দিয়ে।
৮৪। আমেনা বিবি মাজারের মধ্যে মূর্ছা গিয়েছিল- শারীরিক দুর্বলতায়।
৮৫। খালেক ব্যাপারীর গলায় শিশুর ভাব আসে- সন্দেহে।
৮৬। আমেনা বিবির ক্ষেত্রে প্রজোয্য- স্বামীভীরু।
৮৭। যে গাছ দেখে আমেনা বিবি বুঝত যে স্বামীর বাড়িতে পৌছেছে- তালগাছ।
৮৮।মোদাব্বের মিয়ার ছেলের নাম- আক্কাস।
৮৯। মজিদ আক্কাসকে দমাতে চাওয়ায় তার চরিত্রে উম্মোচিত হয়েছে- শোষণ।
৯০। ‘পুলক’ শব্দের অর্থ- আনন্দ।
৯১।“বেত্তমিজের মতো কথা কইস না” উক্তিটি যার সম্পর্কে করা হয়েছিল- আক্কাস।
৯২।মহব্বতনগর গ্রামের বড় মসজিদ নির্মাণে বারো আনা ব্যয় বহন করতে চেয়েছিল - খালেক ব্যাপারী।
৯৩। মহব্বতনগর গ্রামে মসজিদ নির্মাণে তদারকিতে ছিল- মজিদ।
৯৪। সচ্ছলতায় শিকড়গাড়া বৃক্ষ ছিল- মজিদ।
৯৫। মজিদের যশ, খ্যাতির উৎস –পুরনো কবরটি।
৯৬। মজিদের নিঃসঙ্গবোধের কারণ- নিঃসন্তান হওয়ায়।
৯৭। যার বিলাপে জমিলার মন খারাপ হয়েছিল- খ্যাংটা বুড়ির।
৯৮। রহিমা পোষ্য রাখতে চায়- হাসুনিকে।
৯৯। “মজিদের মনে কিন্তু অন্য কথা ঘোরে” এখানে অন্য কথা বলতে বোঝানো হয়েছে- দ্বিতীয় বিয়ে।
১০০। ‘লালসালু’ উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু- গ্রামীণ জীবন, কুসংস্কার ও গোঁড়ামি


BCS & All Jobs Math

  বিসিএস ও অন্যান্য সকল চাকুরী পরীক্ষার জন্য 100% গণিত প্রিপারেশন এর জন্য আমাদের সাথে থাকুন:  01736960513  নন-ক্যাডার লিখিত গণিত:   01. যুদ্...