Monday, July 31, 2023

বাংলা (পদ্যাংশ)

 বাংলা পদ্যাংশের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি

প্রতিটি গল্প/প্রবন্ধ/পদ্য এর ক্লাস/ক্লাস টেস্ট  মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে যোগাযোগ করুন- 01736960513  [সকল বিষয়ে অনলাইন/অফলাইন]

বাংলা সাহিত্য

হ্যান্ডনোটবিষয়পরীক্ষা
হ্যান্ডনোট-০১বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ
লিংক-
 https://forms.gle/QdCM7hMpeoUYbJFp9
মেমোরি টেস্ট
নমুনা (এই ফরমেটে পরীক্ষা হবে) 
হ্যান্ডনোট-০২বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন
অপরিচিতা
হ্যান্ডনোট-০১
হ্যান্ডনোট-০৩
আমার পথ
বিলাসী
হ্যান্ডনোট-০২
হ্যান্ডনোট-০৪
গৃহ
আহবান
হ্যান্ডনোট-০৩
হ্যান্ডনোট-০৫
মানব-কল্যাণ
মাসি-পিসি
হ্যান্ডনোট-০৪
হ্যান্ডনোট-০৬
বায়ান্নর দিনগুলো
রেইকোট
হ্যান্ডনোট-০৫
হ্যান্ডনোট-০৭
মহাজাগতিক কিউরেটর
নেকলেস
হ্যান্ডনোট-০৬
হ্যান্ডনোট-০৮নাটক: সিরাজউদ্দৌলা
হ্যান্ডনোট-০৭
হ্যান্ডনোট-০৯লালসালুহ্যান্ডনোট-০৮
হ্যান্ডনোট-১০বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
সোনার তরী
হ্যান্ডনোট-০৯
হ্যান্ডনোট-১১সুচেতনা
তাহারেই পড়ে মনে
হ্যান্ডনোট-১০
হ্যান্ডনোট-১২প্দ্মা
আঠারো বছর বয়স
হ্যান্ডনোট-১১
হ্যান্ডনোট-১৩ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
হ্যান্ডনোট-১২
হ্যান্ডনোট-১৪নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
ছবি
হ্যান্ডনোট-১৩
হ্যান্ডনোট-১৪         

বাংলা ব্যাকরণ:  প্রতিটি হ্যান্ডনোট এর ক্লাস/ক্লাস টেস্ট  মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে যোগাযোগ করুন- 01736960513  [সকল বিষয়ে অনলাইন/অফলাইন] 

বাংলা ব্যাকরণ

হ্যান্ডনোটবিষয়পরীক্ষা
হ্যান্ডনোট-০১বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণমেমোরি টেস্ট
হ্যান্ডনোট-০২(i) ভাষা (ii) বাংলা ব্যাকরণ ও এর আলোচ্য বিষয় (iii) ধ্বনিতত্ত্ব (iv) ধ্বনির পরিবর্তনহ্যান্ডনোট-০১
হ্যান্ডনোট-০৩
(i) ণ-ত্ব ও ষ-ত্ব বিধান (ii) সন্ধিহ্যান্ডনোট-০২
হ্যান্ডনোট-০৪
(i) পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ (ii) দ্বিরুক্ত শব্দ (iii) সংখ্যাবাচক শব্দহ্যান্ডনোট-০৩
হ্যান্ডনোট-০৫
(i) বচন (ii) পদাশ্রিত নির্দেশক (iii) সমাসহ্যান্ডনোট-০৪
হ্যান্ডনোট-০৬
(i) উপসর্গ (ii) ধাতু (iii) কৃৎ-প্রত্যয়ের বিস্তারিত আলোচনা (iv) তদ্ধিত প্রত্যয়হ্যান্ডনোট-০৫
হ্যান্ডনোট-০৭
(i) শব্দের শ্রেণিবিভাগ (ii) পদ-প্রকরণ (iii) ক্রিয়াপদহ্যান্ডনোট-০৬
হ্যান্ডনোট-০৮(i) কাল,পুরুষ এবং কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ (ii) সমাপিকা, অসমাপিকা ও যৌগিক ক্রিয়ার প্রয়োগ (iii) বাংলা অনুজ্ঞাহ্যান্ডনোট-০৭
হ্যান্ডনোট-০৯(i) ক্রিয়া-বিভক্তি: সাধু ও চলিত (ii) কারক ও বিভক্তি এবং সম্বন্ধ পদ ও সম্বোধন পদ (iii) অনুসর্গ বা কর্মপ্রবচনীয় শব্দহ্যান্ডনোট-০৮
হ্যান্ডনোট-১০(i) বাক্য প্রকরণ (ii) শব্দের যোগ্যতার বিকাশ ও বাগধারাহ্যান্ডনোট-০৯
হ্যান্ডনোট-১১(i) বাচ্য এবং বাচ্য পরিবর্তন (ii) উক্তি পরিবর্তন (iii) যতি বা ছেদ-চিহ্নের লিখন কৌশলহ্যান্ডনোট-১০
হ্যান্ডনোট-১২(i) বাক্যের শ্রেণিবিভাগ (ii) বাক্যে পদ-সংস্থাপনার ক্রম (iii) এক কথায় প্রকাশহ্যান্ডনোট-১১
হ্যান্ডনোট-১৩(i) পারিভাষিক শব্দ (ii) অনুবাদহ্যান্ডনোট-১২
হ্যান্ডনোট-১৪(i) বানান (ii) উচ্চারণ বিধি (iii) সমার্থক শব্দহ্যান্ডনোট-১৩
হ্যান্ডনোট-১৪

প্রতিটি হ্যান্ডনোট এর ক্লাস/ক্লাস টেস্ট  মডেল টেস্ট পরীক্ষা দিতে যোগাযোগ করুন- 01736960513  [সকল বিষয়ে অনলাইন/অফলাইন]

বাংলা পদ্য অংশের সিলেবাসভুক্ত কবিতা: 

ক্র.নংকবিতাকবিজন্ম-মৃত্যুছন্দপত্রিকায় প্রকাশকাব্য গ্রন্থ
(অন্তগত/
উৎস)
০১বিভীষণের প্রতি মেঘনাদমাইকেল মধুসূদন দত্ত১৮২৪-১৮৭৩খ্রি.অক্ষরবৃত্ত-মেঘনাদবধ কাব্য
(ষষ্ঠ সগ
০২.সোনার তরীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর১৮৬১-১৯৪১ খ্রি.মাত্রাবৃত্ত ছন্দ-সোনার তরী
০৩.বিদ্রোহীকাজী নজরুর ইসলাম১৮৯৯-১৯৭৬ খ্রি.-অগ্নিবীণা(১৯২২)
০৪.প্রতিদানজসীমউদ্দীন১৯০৩-১৯০৭৬--বালুচর
০৫.সুচেতনাজীবনানন্দ দাশ১৮৯৯-১৯৫৪ খ্রি.---
০৬.তাহারেই পড়ে মনেসুফিয়া কামাল১৯১১-১৯৯৯মাাত্রাবৃত্তমাসিক মোহাম্মদীসোাঁঝের মায়া
০৭.প্দ্মাফররুখ আহমদ----
০৮.আঠারো বছর বয়সসুুকান্ত ভট্টাচার্য১৯২৬-১৯৪৭মাত্রাবৃৃত্তছাড়পত্র
০৯.ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯শামসুর রাহমান১৯২৯-২০০৬গদ্যছন্দনিজ বাসভূমে
১০.আমি কিংবদন্তির কথা বলছিআবু জাফর ওবায়দুল্লাহ১৯৩৪-২০০১গদ্যছন্দ-আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
১১.নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়সৈয়দ শামসুল হক১৯৩৫-২০১৬গদ্যছন্দনূরলদীনের সারাজীবন
১২ছবিআবুু হেনা মোস্তফা কামাল১৯৩৬-১৯৮৯গদ্যছন্দ-আপন যৌবন বৈরী

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

🚩  মাত্রাবৃত্ত আসার- আঠারো বছর বয়স, সাম্যবাদী, রক্তে আমার অনাদি অন্থি।

🚩 অক্ষর বৃত্ত- ঐলোসেবিতা এই - ঐকতান - ঐকতান, লোকলোকান্তর, সেই অস্ত্র, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ, তাহারেই পড়ে মনে, এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে।

🚩  গদ্য ছন্দে আমি ফেনু- আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯, নুরুল দিনের কথা মনে পড়ে যায়। যায়।

🚩  ঊনিশ শতকের আধুনিক বাংলা কবিতার জনক কে- মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

🚩 বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক মহাকাব্যের নাম কি- মেঘনাদবধ কাব্য।

🚩 মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রবর্তিত ছন্দের নাম কী- অমিত্রাক্ষর ছন্দ।

🚩 বিভীষণের সহোদর কে- রাবণ।

🚩 কবিতায় কমলবনকিসের প্রতীক- ন্যায়ের ও কল্যাণের ।

🚩 কবিতায় কে কাকে রক্ষোমণি বলে সম্বোধন করা হয়েছে- মেঘনাদ
বলে সম্বোধন করা হয়েছে- মেঘনাদ, রাবণকে।

🚩 মাইকেল মধুসূদন দত্ত কত সালে নিজের নামের শুরুতে মাইকেল যোগ করে
নিজের নামের শুরুতে মাইকেল যোগ করে?- ১৯৪৩ সালে ।

🚩 মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রথম প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থের নাম কী
প্রকাশিত বাংলা গ্রন্থের নাম কী?- শর্মিষ্ঠা।

🚩 রাবনের মধ্যম সহোদর কে?- কুম্ভকর্ণ ।

🚩 বিভীষণের সহোদর কে?- রাবণ।

🚩  মেঘনাদকে বাসবত্রাস বলার কারণ কী।- বাসবকে পরাজিত করেছে বলে।

🚩 বিভীষণ রাজা বলতে কাকে বুঝিয়েছেন?- রামকে।

🚩 জ্ঞাতি বলতে বোঝায়? সগোত্র।

🚩 বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কাব্যাংশে বিভীষণ কে বিভীষণ কে?- মেঘনাদের সহোদর।

🚩 নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে মেঘনাদ কোন দেবতার পূজা করে যুদ্ধে যাত্রা করে
কোন দেবতার পূজা করে যুদ্ধে যাত্রা করে?- ইষ্টদেবতা বৈশ্বানরের বা অগ্নিদেবের।

🚩 অমিত্রাক্ষার ছন্দের সার্থক প্রয়োগ হয় কোন বাক্যে প্রয়োগ হয় কোন বাক্যে?- তিলোত্তমাসম্ভব বাক্যে।

🚩 বাংলা সাহিত্যের প্রথম প্রহসন কোনটি কোনটি?- একেই কি বলে সভ্যতা।

🚩 তস্কর শব্দের অর্থ কি?- চোর।

🚩 বাংলা ভাষায় প্রথম সার্থক মহাকাব্য কে রচনা করেন মহাকাব্য কে রচনা করেন?- মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

🚩 মধুসূদনের সাহিত্যের মূল সুর হিসাবে কোনটি গ্রহনযোগ্য সুর হিসাবে কোনটি গ্রহনযোগ্য?- দেশপ্রেম।

🚩 পশিল অর্থ কী? প্রবেশ করল। মধুসূদন রচনাবলি: মধুসূদন দত্তকে আধুনিক বাংলা নাটকের জনক বলা হয়। নাটক: শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, কৃষ্ণকুমারী, হেক্টর বধ, মায়াকানন, বিষ না ধনুর্গুণ (অসমাপ্ত)। প্রহসন: একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ। পত্রকাব্য: বীরাঙ্গনা। কাব্যগ্রন্থ: তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১), ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা, চতুর্দশপদী কবিতাবলী। ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ: ঞযব পধঢ়ঃরাব ষধফরব. কবি-পরিচিতি
আধুনিক বাংলা কবিতার অগ্রদূত মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫এ জানুয়ারি যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মাতা জাহ্নবী দেবী। মায়ের তত্ত্বাবধানে গ্রামেই তাঁর তত্ত্বাবধানে গ্রামেই তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয়। মধুসূদন ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার হিন্দু কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সাহিত্য-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। মধুসূদন ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার হিন্দু কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে ছাত্রাবস্থাতেই তাঁর সাহিত্য-প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে তিনি পিতৃপ্রদত্ত নামের শুরুতে মাইকেলশব্দ যোগ করেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁকে হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরের বিশপ্স কলেজে ভর্তি হতে হয়। সেখানেই তিনি গ্রিক হওয়ার কারণে তাঁকে হিন্দু কলেজ পরিত্যাগ করে শিবপুরের বিশপ্স কলেজে ভর্তি হতে হয়। সেখানেই তিনি গ্রিক, লাতিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষার সুযোগ
পান। মধুসূদন বহু ভাষায় দক্ষ পান। মধুসূদন বহু ভাষায় দক্ষ ছিলেন । ইংরেজি ও সংস্কৃতসহ
ফরাসি, জার্মান এবং ইতালীয় ভাষাতেও তিনি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। হিন্দু কলেজে ছাত্রাবস্থায় তাঁর সাহিত্যচর্চার মাধ্যম ছিল ইংরেজি ভাষা। কিন্তু বিদেশি ভাষার মোহ থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মাতৃভাষার কাছে ফিরে আসেন। মধুসূদন-পূর্ব হাজার বছরের বাংলা কবিতার ছন্দ ছিল পয়ার। একটি চরণের শেষে আর একটি চরণের মিল ছিল ওই ছন্দের অনড় প্রথা। মধুসূদন বাংলা কবিতার এ প্রথাকে ভেঙে দিলেন। দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। হিন্দু কলেজে ছাত্রাবস্থায় তাঁর সাহিত্যচর্চার মাধ্যম ছিল ইংরেজি ভাষা। কিন্তু বিদেশি ভাষার মোহ থেকে মুক্ত হয়ে তিনি মাতৃভাষার কাছে ফিরে আসেন। মধুসূদন-পূর্ব হাজার বছরের বাংলা কবিতার ছন্দ ছিল পয়ার। একটি চরণের শেষে আর একটি চরণের মিল ছিল ওই ছন্দের অনড় প্রথা। মধুসূদন বাংলা কবিতার এ প্রথাকে ভেঙে দিলেন। তাঁর প্রবর্তিত ছন্দকে বলা হয় অমিত্রাক্ষর ছন্দ। তবে এটি বাংলা অক্ষরবৃত্ত ছন্দেরই নবরূপায়ণ। বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেটেরও প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলা নাটকের উদ্ভবযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছন্দেরই নবরূপায়ণ। বাংলায় চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেটেরও প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত। বাংলা নাটকের উদ্ভবযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার তিনি। আধুনিক নাটক শর্মিষ্ঠা’, ‘পদ্মাবতীকৃষ্ণকুমারীএবং প্রহসন একেই কি বলে সভ্যতা?’বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁতাঁর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলো হলো : তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’,‘‘মেঘনাদবধ-কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’,‘বীরাঙ্গনা কাব্য
কাব্য’, ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলি ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯এ জুন কলকাতায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করেন।
এতক্ষণে”- অরিন্দম কহিলা বিষাদে-
জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল
রক্ষঃপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব
এ কাজ, নিকষা সতী তোমার জননী,
সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ? শূলিশম্ভুনিভ
কুম্ভকর্ণ? ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী!
নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
ণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?
কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরু জন তুমি
পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,
পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,
লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।


উত্তরিলা বিভীষণ, “বৃা এ সাধনা,
ধীমান্! রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে
তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে
অনুরোধ?” উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-
হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!
রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে
আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!
স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে;
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি
ধূলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে
কে তুমি? জনম তব কোন মহাকুলে?
কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে
করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে;
যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে,
শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,
কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে
মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,
অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।


ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ; নহিলে
অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?
কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রা?
নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে
এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া
এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে,
বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি!
দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ,
রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, পরাμম দাসের! কী দেখি
ডরিবে এ দাস হেন দুর্বল মানবে?
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগল্ভে পশিল
দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।


তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে
বনবাসী! হে বিধাতঃ, নন্দন-কাননে
ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে
কীটবাস? কহ তাত, সহিব কেমনে
হেন অপমান আমি,- ভ্রাতৃ-পুত্র তব?
তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?”
মহামন্ত্র-বলে যথা নম্ররশিরঃ ফণী,
মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী
রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;
নহি দোষী আমি, বৎস; বৃা ভর্ৎস মোরে
তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা
এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি!
বিরত সতত পাপে দেবকুল; এবে
পাপপূর্ণ লঙ্কাপুরী; প্রলয়ে যেমতি
বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী
তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?”


রুষিলা বাসবত্রাস। গম্ভীরে যেমতি
নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি,
কহিলা বীরেন্দ্র বলী,ধর্মপথগামী,
হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে
তুমি; কোন্ ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,এ সকলে দিলা
জলাঞ্জলি? শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়ঃ, পরঃ পরঃ সদা!
এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?
কিন্তু বৃা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,
হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে?
গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।
[নির্বাচিত অংশ]
  শব্দার্থ ও টীকা ⛵   বিভীষণ রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর। রাম-রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী। রামের ভক্তি। 👑   এতক্ষণেঅরিন্দম কহিলা রুদ্ধদ্বার নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ যে পথপ্রদর্শক বিভীষণ লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশের অন্যতম কারণ যে পথপ্রদর্শক বিভীষণ, তা অনুধাবন করে বিস্মিত ও বিপন্ন মেঘনাদের প্রতিক্রিয়া

👑   অরিন্দম অরি বা শত্রুকে দমন করে যে। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।          

👑   পশিল প্রবেশ করল।

👑   রক্ষঃপুরে রাক্ষসদের পুরীতে বা নগরে। এখানে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে।

👑   রক্ষঃশ্রেষ্ঠ রাক্ষসকুলের শ্রেষ্ঠ, রাবণ।

👑   তাত পিতা। এখানে পিতৃব্য বা চাচা অর্থে।

👑   নিকষা রাবণের মা।     

👑    শূলীশম্ভুনিভ শূলপাণি মহাদেবের মতো।

👑   কুম্ভকর্ণ রাবণের মধ্যম সহোদর।

👑   বাসববিজয়ী দেবতাদের রাজা ইন্দ্র বা বাসবকে জয় করেছে যে। এখানে মেঘনাদ। একই কারণে মেঘনাদের অপর নাম ইন্দ্রজিৎ।

👑  তস্কর চোর।             👑     গঞ্জি তিরস্কার করি।

👑   রামানুজ রাম+অনুজ = রামানুজ। এখানে রামের অনুজ লক্ষ্মণকে বোঝানো হয়েছে।

👑   শমন-ভবনে যমালয়ে। 👑 ভঞ্জিব আহবে যুদ্ধদ্বারা বিনষ্ট করব।

👑   আহবে যুদ্ধে।            👑 ধীমান্ ধীসম্পন্ন। জ্ঞানী।

👑   রাঘব রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। এখানে রামচন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে।

👑   রাঘবদাস রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ।

👑   রাবণি রাবণের পুত্র। এখানে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে।

👑    স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে - বিধাতা চাঁদকে নিশ্চল আকাশে স্থাপন করেছেন।

👑    বিধু চাঁদ।        👑 স্থাণু নিশ্চল। 

👑    রক্ষোরথী রক্ষকুলের বীর।

👑   রথী রথচালক। রথচালনার মাধ্যমে যুদ্ধ করে যে।

👑   শৈবালদলের ধাম পুকুর। বদ্ধ জলাশয়।       👑 শৈবাল শেওলা।

👑   মৃগেন্দ্র কেশরী কেশরযুক্ত পশুরাজ সিংহ।

👑   মৃগেন্দ্র পশুরাজ সিংহ।

👑   কেশরী কেশরযুক্ত প্রাণী। সিংহ।

👑   মহারথী মহাবীর। শ্রেষ্ঠ বীর।

👑   মহারথীপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ বীরদের আচরণ-প্রাপ্ত।

👑   সৌমিত্রি লক্ষ্মণ। সুমিত্রার গর্ভজাত সন্তান বলে লক্ষ্মণের অপর নাম সৌমিত্রি।

👑   নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থান। এখানে যজ্ঞ করে মেঘনাদ যুদ্ধে যেত। মেঘনাদবধ-কাব্যেযুদ্ধযাত্রার প্রাক্কালে নিরস্ত্র মেঘনাদ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা বৈশ্বানর বা অগ্নিদেবের পূজারত অবস্থায় লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে নিহত হয়।

👑   প্রগলভে নির্ভীক চিত্তে।                       

👑   দম্ভী দম্ভ করে যে। দাম্ভিক।

👑   নন্দন কানন স্বর্গের উদ্যান।       

👑   মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশিরঃ ফণী মন্ত্রপূত সাপ যেমন মাথা নত করে।

👑   লক্ষি লক্ষ করে।              

👑    ভর্ৎস ভর্ৎসনা বা তিরস্কার করছ।

👑   মজাইলা বিপদগ্রস্ত করলে।       

👑   বসুধা পৃথিবী।

👑   তেঁই তজ্জন্য । সেহেতু।                       

👑    রুষিলা রাগান্বিত হলো।

👑   বাসবত্রাস বাসবের ভয়ের কারণ যে মেঘনাদ।

👑   মন্দ্র শব্দ। ধ্বনি।       

👑   জীমূতেন্দ্র মেঘের ডাক বা আওয়াজ।

👑   বলী বলবান। বীর।                 

👑    জলাঞ্জলি সম্পূর্ণ পরিত্যাগ।

👑   শাস্ত্রে বলে, ...পর

👑   শাস্ত্রে বলে, ... পরঃ সদা! শাস্ত্রমতে গুণহীন হলেও নির্গুণ স্বজনই শ্রেয়, কেননা গুণবান হলেও পর সর্বদা পরই থেকে যায়।           

👑    নীচ হীন। নিকৃষ্ট। ইতর।

👑   দুর্মতি অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি।

পাঠ-পরিচিতি বিভীষণের প্রতি মেঘনাদকাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ-কাব্যে’-বধো’ (বধ) নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে সংকলিত হয়েছে। সর্বমোট নয়টি সর্গে বিন্যস্ত মেঘনাদবধ-কাব্যের ষষ্ঠ সর্গে লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসী বীর মেঘনাদের। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আ ষষ্ঠ সর্গে লক্ষ্মণের হাতে অন্যায় যুদ্ধে মৃত্যু ঘটে অসমসাহসী বীর মেঘনাদের। রামচন্দ্র কর্তৃক দ্বীপরাজ্য স্বর্ণলঙ্কা আμান্ত হলে রাজা রাবণ শত্রুর উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন। যুদ্ধজয় নিশ্চিত
উপর্যুপরি দৈব-কৌশলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর
পর মেঘনাদকে পিতা রাবণ পরবর্তী দিবসে অনুষ্ঠেয় মহাযুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে বরণ করে নেন।
যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার পূর্বেই নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে
ইষ্টদেবতা অগিড়বদেবের পূজা সম্পন্ন করতে নস্থির করে। মায়া দেবীর আনুকূল্যে এবং রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়, লক্ষ্মণ শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশে সমর্থ হয়। কপট লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময় প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশ যে মায়াবলে
সমর্থ হয়। কপট লক্ষ্মণ নিরস্ত্র মেঘনাদের কাছে যুদ্ধ প্রার্থনা করলে মেঘনাদ বিস্ময়
প্রকাশ করে। শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষ্মণের অনুপ্রবেশ
যে মায়াবলে সম্পন্ন হয়েছে, বুঝতে বিলম্ব ঘটে না তার। ইতোমধ্যে লক্ষ্মণ তলোয়ার কোষমুক্ত করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রাথর্ না করে লক্ষ্মণের কাছে। কিন্তু লক্ষ্মণ তাকে সময় না দিয়ে আ
করলে মেঘনাদ যুদ্ধসাজ গ্রহণের জন্য সময় প্রাথর্ না করে লক্ষ্মণের কাছে। কিন্তু লক্ষ্মণ
তাকে সময় না দিয়ে আμমণ করে। এ সময়ই অকস্মাৎ যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারের দিকে চোখ পড়ে মেঘনাদের; দেখতে পায় বীরযোদ্ধা পিতৃব্য বিভীষণকে। মুহূর্তে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় তার কাছে। খুল্লতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে
হয়ে যায় তার কাছে। খুল্লতাত বিভীষণকে প্রত্যক্ষ করে দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র মেঘনাদ যে পতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সেই নাটকীয় ভাষ্যই বিভীষণের প্রতি মেঘনাদঅংশে সংকলিত হয়েছে। এ অংশে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা। জ্ঞাতিত্ব
ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে ঘৃণা। জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির গুরুত্বের কথা যেমন এখানে ব্যক্ত হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বলে।
হয়েছে তেমনি এর বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে নীচতা ও বর্বরতা বলে। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাল্মীকি-রামায়ণকে নবমূল্য দান করেছেন এ কাব্যে। মানবকেন্দ্রিকতাই রেনেসাঁস বা নবজাগরণের সারকথা। ওই নবজাগরণের প্রেরণাতেই রামায়ণের রাম-লক্ষ্মণ মধুসূদনের লেখনীতে হীনরূপে এবং রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত। দেবতাদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত রাম-লক্ষ্মণ নয়
মধুসূদন দত্ত বাল্মীকি-রামায়ণকে নবমূল্য দান করেছেন এ কাব্যে। মানবকেন্দ্রিকতাই রেনেসাঁস
বা নবজাগরণের সারকথা। ওই নবজাগরণের প্রেরণাতেই রামায়ণের রাম-লক্ষ্মণ মধুসূদনের লেখনীতে
হীনরূপে এবং রাক্ষসরাজ রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদ যাবতীয় মানবীয় গুণের ধারকরূপে উপস্থাপিত।
দেবতাদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত রাম-লক্ষ্মণ নয়, পুরাণের রাক্ষসরাজ
রাবণ ও তার পুত্র মেঘনাদের প্রতিই মধুসূদনের মমতা ও শ্রদ্ধা।   বিভীষণের প্রতি মেঘনাদকাব্যাংশটি ১৪ মাত্রার অমিল প্রবহমান যতিস্বাধীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পঙ্ক্তির চরণান্তের মিলহীনতার কারণে এ ছন্দ ছন্দে রচিত। প্রথম পঙ্ক্তির সঙ্গে দ্বিতীয় পঙ্ক্তির চরণান্তের মিলহীনতার কারণে এ ছন্দ
অমিত্রাক্ষর ছন্দনামে সমধিক পরিচিত। এ কাব্যাংশের প্রতিটি পঙ্ক্তি ১৪ মাত্রায় এবং ৮ + ৬ মাত্রার দুটি পর্বে বিন্যস্ত। লক্ষ করার বিষয় যে
১৪ মাত্রায় এবং ৮ + ৬ মাত্রার দুটি পর্বে বিন্যস্ত। লক্ষ করার বিষয় যে, এখানে দুই পঙ্ক্তির চরণান্তিক মিলই কেবল পরিহার করা হয়নি, যতিপাত বা বিরামচিহ্নের স্বাধীন ব্যবহারও হয়েছে বিষয় বা বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে। এ কারণে ভাবপ্রকাশের প্রবহমানতাও কাব্যাংশটির ছন্দের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।
প্রবহমানতাও কাব্যাংশটির ছন্দের বিশেষ লক্ষণ হিসেবে বিবেচ্য।
 

০১. মধুসূদন দত্ত সৌমিত্রবলতে কাকে বুঝিয়েছেন[জাহা: বিশ্ব: ‘C' শিফট-৫ ২০২২-২৩].  
        উত্তর- লক্ষণের স্ত্রী সুমিতাকে। 
০২. বাংলা কাব্যে অমিত্রক্ষর ছন্দের প্রবর্তক কে[চবি ‘B’ ২০১৩-১৪] 
        উত্তর- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
০৩. নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে? এখানে তস্করকে[GST ‘C’ ২০২০-২১] 
        উত্তর: লক্ষণ। 
০৪. ‘হে বিধাতাঃ, নন্দন কাননে.ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে? এখানে ‘দুরাচার’ কে? উত্তর: লক্ষ্মণ।
০৫.   বাংলা সাহিত্যে প্রথম পত্রকাব্য রচয়িতা কে? 
        উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
০৬.  প্রমীলা কার স্ত্রী? উত্তর: মেঘনাদের।
০৭.   বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছে কোন কবিতায়? 
        উত্তর: বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ।
০৮.  ‘মেঘনাদ বধ’ কাব্যের উৎস কী? 
        উত্তর: রামায়ণ।
০৯.   ‘ --- যার নীচসহ, নীচ সে দুর্মতি’- শূন্যস্থানে বসবে- 
        উত্তর: গতি।
১০.   ‘পরদোষে কে চাহে মজিতে?- উক্তিটি কার? 
        উত্তর: বিভীষণের।
১১.   বাসব কে? উত্তর: দেবতাদের রাজা ইন্দ্র।
১২.   বিভীষণ দ্বার ছাড়লে মেঘনাদ কোথায় যাবে বলেছিল? 
        উত্তর: অস্ত্রাগারে।
১৩.  ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশে ‘দুর্মতি’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? 
        উত্তর: অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি।
১৪.   রাম-রাবণের যুদ্ধে বিভীষণ কোন পক্ষে কাজ করে? 
        উত্তর: রামের পক্ষে।
১৫.   ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় ‘রাবণ-আত্মজ’ বলা হয় কাকে? 
        উত্তর: মেঘনানাদকে।
১৬.   ‘এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদে’-এখানে ‘অরিন্দম’ কে? 
        উত্তর: মেঘনাদ।
১৭.   ‘শমন-ভবন’ শব্দটির অর্থ- যমালয়।
১৮.   ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতায় বিভীষণ কে? 
        উত্তর: রাবণের সহোদর।
১৯.   শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কার সহায়তায় লক্ষ্মণ মেঘনাদের যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে? 
        উত্তর: বিভীষণের সহায়তায়।
২০.   ‘মেঘনাদবধ-কাব্যে’ কত দিনের ঘটনা বর্ণিত আছে? 
        উত্তর: তিন দিন ও দুই রাত্রির। 

সোনার তরী [রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হলো সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা
খরপরশা-
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা-
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
প্রভাতবেলা-
এপারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে!
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায়
ভাঙে দু ধার-

দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।।

ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে?

বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।

যেয়ো যেথা যেতে চাও,

যারে খুশি তারে দাও -

শুধু তুমি নিয়ে যাও

ক্ষণিক হেসে

আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।।

যত চাও তত লও তরণী-পরে।

আর আছে- আর নাই, দিয়েছি ভরে।।

এতকাল নদীকূলে

যাহা লয়ে ছিনু ভুলে

সকলি দিলাম তুলে

থরে বিথরে-

এখন আমারে লহো করুণা করে।।

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী

আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।

শ্রাবণগগন ঘিরে

ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,

শূন্য নদীর তীরে

রহিনু পড়ি-

যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।। 

০১. আট মাত্রার মাত্রাবৃত্তে রচিত কবিতা কোনটি? [বেরোবি ‘বি’ ২০১৬-১৭]
      উত্তর: সোনার তরী
০২. 


প্রতিদান

সুচেতনা [জীবনানন্দ দাশ]

কবি-পরিচিতি
আধুনিক বাংলা কাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। ১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তিনি বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং মা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন সেকালের বিখ্যাত কবি। মায়ের কাছ থেকে তিনি কবিতা লেখার প্রেরণা লাভ করেছিলেন। স্বল্প সময়ের জন্য বিভিন্ন পেশা অবলম্বন করলেও মূলত ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেন।
কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতায় সূক্ষ্ম ও গভীর অনুভবের এক জগৎ তৈরি করেন। বিশেষ করে গ্রামবাংলার নিসর্গের যে ছবি তিনি এঁকেছেন, বাংলা সাহিত্যে তার তুলনা চলে না। সেই নিসর্গের সঙ্গে অনুভব ও বোধের বহুতর মাত্রা যুক্ত হয়ে তাঁর হাতে অনন্যসাধারণ কবিতাশিল্প রচিত হয়েছে। এই অসাধারণ কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্ররূপময়বলে আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া ব্যক্তিমানুষের নিঃসঙ্গতা, আধুনিক জীবনের বিচিত্র যন্ত্রণা ও হাহাকার এবং সর্বোপরি জীবন ও জগতের রহস্য ও মাহাত্ম্য সন্ধানে তিনি এক অপ্রতিম কবিভাষা সৃষ্টি করেছেন। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে আখ্যায়িত করেছেন নির্জনতম কবিবলে। উপমা, চিত্রকল্প, প্রতীক সৃজন, আলো-আঁধারের ব্যবহার, রঙের ব্যবহার এবং অনুভবের বিচিত্র মাত্রার ব্যবহারে তাঁর কবিতা লাভ করেছে অসাধারণত্ব। তাঁর নিসর্গবিষয়ক কবিতা বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে ও ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে তীব্রভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হিসেবেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর বিশেষ স্থান রয়েছে। জীবনানন্দের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : ঝরা পালক’, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘বনলতা সেন’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘বেলা অবেলা কালবেলা’, ‘রূপসী বাংলা কবিতার কথাতাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ এবং মাল্যবানসুতীর্থতাঁর বিখ্যাত দুইটি উপন্যাস ।
জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২২এ অক্টোবর কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।


সুচেতনা, তুমি এক দূরতর দ্বীপ
বিকেলের নক্ষত্রের কাছে;
সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে
নির্জনতা আছে।
এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা
সত্য; তবু শেষ সত্য নয়।
 
আজকে অনেক রূঢ় রৌদ্রে ঘুরে প্রাণ
পৃথিবীর মানুষকে মানুষের মতো
ভালোবাসা দিতে গিয়ে তবু,
দেখেছি আমারি হাতে হয়ত নিহত
ভাই বোন বন্ধু পরিজন পড়ে আছে;
পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন;
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীরই কাছে।
সুচেতনা, এই পথে আলো জ্বেলে-এ পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে;
সে অনেক শতাব্দীর মনীষীর কাজ;
এ বাতাস কী পরম সূর্যকরোজ্জ্বল;
প্রায় ততদূর ভালো মানব-সমাজ
আমাদের মতো ক্লান্ত ক্লান্তিহীন নাবিকের হাতে
ড়ে দেবো, আজ নয়, ঢের দূর অন্তিম প্রভাতে।
মাটি-পৃথিবীর টানে মানবজন্মের ঘরে কখন এসছে,
না এলেই ভালো হতো অনুভব করে;
এসে যে গভীরতর লাভ হলো সে-সব বুঝেছি
শিশির শরীর ছুঁয়ে সমুজ্জ্বল ভোরে;
দেখেছি যা হলো হবে মানুষের যা হবার নয়-
শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়।
শব্দার্থ ও টীকা
🔭   সুচেতনা- সুচেতনা নামে এক শুভ চেতনার কথাই এখানে বোঝানো হয়েছে। কবির কল্পনায় দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন এই চেতনার সবুজে বিরাজ করছে নির্জনতা। অর্থাৎ এই শুভ চেতনা সর্বত্র বিস্তারিত, বিরাজমান নয়।

🔭    এই পৃথিবীর .... সত্য নয়- সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি বহু যুদ্ধ-রক্তপাত-প্রাণহানী সংঘটিত হয়েছে এবং এখানো হচ্ছে। তবে এই ধ্বংসাত্মক দিকটিই পৃথিবীর শেষ সত্য নয়।

🔭    আজকে অনেক... পরিজন পড়ে আছে- প্রেম, সত্য ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও পৃথিবীতে অগণিত প্রাণহাণি, রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। অর্থাৎ অনেক রক্তাক্ত পথ পাড়ি দিয়েই পৌঁছাতে হয় ভালোবাসার পরিণামে।

🔭    এই পথে আলো ..... ক্রমমুক্তি হবে- পৃথিবীব্যাপ্ত গভীর অসুখ বা বিপর্যয় থেকে মুক্তির পথই শুভ চেতনা। ইতিবাচক এ চেতনার আলো প্রজ্বলনের মাধ্যমেই সকল বিপর্যয় থেকে পৃথিবী ও মানুষের মুক্তি ঘটবে।

🔭    মাট-পৃথিবীর টানে ... সে-সব বুঝেছি- ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সংকট প্রত্যক্ষ করে পৃথিবীতে মানবরূপে জন্ম না নেওয়াকে আপাতভাবে কাঙিক্ষত মনে হলেও এই পৃথিবী ও শুভ চেতনা থেকে প্রাপ্তিই শেখাবধি আমাদের গভীরভাবে প্রাণিত ও ঋণী করে।

🔭    শাশ্বত রাত্রির .... অনন্ত সুর্য়োদয়- পৃথিবীব্যাপ্ত অন্ধকার বা অশুভের অন্তরালেই আছে সূর্যোদয়, মুক্তির দিশা। সুচেতনার বিকাশেই এই আলোকজ্জ্বোল পৃথিবীর দেখা মিলবে, এটিই কবির বিশ্বাস।


পাঠ-পরিচিতি:
      ‘সুচেতনাকবিতাটি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন’ (১৯৪২) কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। সুচেতনাজীবনানন্দ দাশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। এ কবিতায় সুচেতনার সম্বোধনে কবি তাঁর প্রার্থিত, আরাধ্য এক চেতনানিহিত বিশ্বাসকে শিল্পিত করেছেন। কবির বিশ্বাসমতে, সুচেতনা এই সত্তা বর্তমান পৃথিবীর গভীরতর ব্যাধিকে অতিক্রম করে সুস্থ ইহলৌকিক পৃথিবীর মানুষকে জীবন্ময় করে রাখে। জীবন্মুক্তির এই চেতনাগত সত্যই পৃথিবীর ক্রমমুক্তির আলোকে প্রজ্বলিত রাখবে, মানবসমাজের অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করবে। শাশ্বত রাত্রির বুকে অনন্ত সূর্যোদয়কে প্রকাশ করবে। 

০১. ‘সুচেতনা’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
       উত্তর: বনলতা সেন (১৯৪২)। 
০২. 

বিদ্রোহী-কাজী নজরুল ইসলাম

বল বীর-
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!
আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা প্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস!
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বীর,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!
আমি মানি না কো কোন আইন,
আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো,
আমি ভীম ভাসমান মাইন।
আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল- বৈশাখীর
আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব বিধাতৃর!
বল বীর চির-
উন্নত মম শির!
আমি সৃষ্টি, আমি ধ্বংস, আমি লোকালয়, আমি শ্মশান,
আমি অবসান, নিশাবসান।
আমি ইন্দ্রণী- সুত হাতে চাঁদ ভালে সূর্য
মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ- তূর্য,
আমি বেদুঈন, আমি চেলিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্ণিশ!
আমি বজ্র, আমি ঈশান বিষাণে ওঙ্কার,
আমি ইস্রাফিদের শিঙ্গার মহা হুঙ্কার,
আমি পিণাক-পাণির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দন্ড,
আমি চক্র ও মহা শঙ্খ, আমি প্রণব নাদ প্রচন্ড !
আমি ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র শিষ্য,
আমি দাবানল দাহ, দাহন করিব বিশ্ব।
আমি উন্মন মন উদাসীর,
আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন- শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর।
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, প্রিয় লাঞ্ছিত
বুকে গতি ফের
আমি উত্তর- বায়ু মলয়- অনিল উদাস পুরবী হাওয়া,
আমি পথিক- কবির গভীর রাগিণী, বেণু বীণে গান গাওয়া।
আমি আকুল নিদাঘ- তিয়াসা, আমি রৌদ্র- রুদ্ধ রবি
আমি মরু- নির্ঝর যার ঝর, আমি শ্যামলিমা ছায়া ছবি!
আমি অর্ফিয়াসের বাঁশরী,
মহা- সিন্ধু উতলা ঘুমঘুম
ঘুম চুমু দিয়ে করি নিখিল বিশ্বে নিঝঝুম
মম বাঁশরীর তানে পাশরি
আমি      শ্যামের হাতের বাঁশরী।
আমি      রুষে উঠি যবে ছুটি মহাকাশ ছাপিয়া,
ভয়ে       সপ্ত নরক হাবিয়া দোজখ নিভে নিভে যায় কাঁপিয়া!
আমি      বিদ্রোহ-বাহী নিখিল অখিল ব্যাপিয়া!
আমি      পরশুরামের কাঠোর কুঠার
নিঃক্ষত্রিয় করিব, বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!
আমি      হল বলরাম-স্কন্ধে
আমি      উপাড়ি ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।
মহা-      বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি      সেই দিন হব শান্ত,
যবে       উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না-
অত্যাচারীরর খড়গ কৃপাণ ভীম-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি      সেই দিন হব শান্ত।
আমি চির-বিদ্রোহী বীর-
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির!  [সংক্ষেপিত] 

০১. “বিদ্রোহী” কবিতায় কবি নিজেকে কার বাঁশির বলেছেন? 
          [জাহা: বিশ্ব: ‘C' শিফট-৫ ২০২২-২৩].
        উত্তর- অর্ফিয়াসের, শ্যামের। 
০২. 

তাহারেই পড়ে মনে

কবি-পরিচিতি
সুফিয়া কামাল বাংলাদেশের বিশিষ্ট মহিলা কবি ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর জন্ম ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ২০এ জুন বরিশালে। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লায়। কবির পিতার নাম সৈয়দ আবদুল বারী এবং মায়ের নাম সাবেরা বেগম। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলমান নারীদের কাটাতে হতো গৃহবন্দি জীবন।
স্কুল কলেজে পড়ার কোনো সুযোগ তাদের ছিল না। ওই বিরুদ্ধ পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। পারিবারিক নানা উত্থান পতনের মধ্যে তিনি স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন। তারই মধ্যে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় আত্মনিয়োগ করেছেন। পরবর্তীকালে সাহিত্য সাধনা ও নারী আন্দোলনে ব্রতী হয়ে তিনি শুধু কবি হিসেবেই বরণীয় হননি, জননী সম্ভাষণে ভূষিত হয়েছেন। সুফিয়া কামালের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : সাঁঝের মায়া’, ‘মায়া কাজল’, ‘কেয়ার কাঁটা’, ‘উদাত্ত পৃথিবীইত্যাদি। এছাড়াও তিনি গল্প, ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা লিখেছেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদকসহ বিভিনড়ব পদকে ভূষিত হয়েছেন তিনি। সুফিয়া কামাল ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০এ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।


 
 

হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?”
কহিল সে ¯স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?”
এখনো দেখনি তুমি?” কহিলাম, “কেন কবি আজ
এমন উন্মনা তুমি? কোথা তব নব পুষ্পসাজ?”
কহিল সে সুদূরে চাহিয়া-
অলখের পাথার বাহিয়া
তরী তার এসেছে কি? বেজেছে কি আগমনী গান?
ডেকেছে কি সে আমারে? শুনি নাই, রাখি নি সন্ধান।
কহিলাম, “ওগো কবি! রচিয়া লহ না আজও গীতি,
বসন্ত-বন্দনা তব কণ্ঠে শুনি- এ মোর মিনতি।
কহিল সে মৃদু মধু-স্বরে-
নাই হলো, না হোক এবারে-
আমারে গাহিতে গান, বসন্তেরে আনিতে বরিয়া-
রহেনি, সে ভুলেনি তো, এসেছে তা ফাগুনে স্মরিয়া।
কহিলাম : ওগো কবি, অভিমান করেছ কি তাই?
যদিও এসেছে তবু তুমি তারে করিলে বৃাই।
কহিল সে পরম হেলায়-
বৃা কেন? ফাগুন বেলায়
ফুল কি ফোটেনি শাখে? পুষ্পারতি লভেনি কি ঋতুর রাজন?
মাধবী কুঁড়ির বুকে গন্ধ নাহি? করে নাই অর্ঘ্য বিরচন?”
হোক, তবু বসন্তের প্রতি কেন এই তব তীব্র বিমুখতা?”
কহিলাম, “উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা?”
কহিল সে কাছে সরে আসি-
কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সনড়ব্যাসী-
গিয়াছে চলিয়া ধীরে পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে
রিক্ত হস্তে! তাহারেই পড়ে মনে, ভুলিতে পারি না কোনো মতে।

শব্দার্থ ও টীকা
    হে কবি - কবিভক্ত এখানে কবিকে সম্বোধন করেছেন।

    নীরব কেন - উদাসীন হয়ে আছেন কেন? কেন কাব্য ও গান রচনায় সক্রিয় হচ্ছেন না।

    ফাগুন যে এসেছে ধরায় - পৃথিবীতে ফাল্গুন অর্থাৎ বসন্তের আবির্ভাব ঘটেছে।

    তব বন্দনায় - তোমার রচিত বন্দনা-গানের সাহায্যে। অর্থাৎ বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে কি তুমি বরণ করে নেবে না?

    দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? - কবির জিজ্ঞাসা- বসন্তের দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে কি না। উদাসীন কবি যে তা লক্ষ করেননি তার এই জিজ্ঞাসা থেকে তা স্পষ্ট হয়। বাতাবি নেবুর ফুল...

    অধীর আকুল - বসন্তের আগমনে বাতাবি লেবুর ফুল ও আমের মুকুলের গন্ধে দখিনা বাতাস দিগি¦দিক সুগন্ধে ভরে তোলে। কিন্তু উন্মনা কবি এসব কিছুই লক্ষ করেননি। কবির জিজ্ঞাসা তাঁর উদাসীনতাকেই স্পষ্ট করে।

    এখনো দেখনি তুমি? - কবিভক্তের এ কথায় আমরা নিশ্চিত হই প্রকৃতিতে বসন্তের সব লক্ষণ মূর্ত হয়ে উঠেছে। অথচ কবি তা লক্ষ করছেন না।

    কোথা তব নব পুষ্পসাজ - বসন্ত এসেছে অথচ কবি নতুন ফুলে ঘর সাজাননি। নিজেও ফুলের অলংকারে সাজেননি।

    অলখ - অলক্ষ। দৃষ্টি অগোচরে।

    পাথার - সমুদ্র।

    বসন্তেরে আনিতে...ফাগুন স্মরিয়া কবি বন্দনা-গান রচনা করে বসন্তকে বর্ণনা করলেও বসন্ত অপেক্ষা করেনি। ফাল্গুন আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে বসন্ত এসেছে। 

    করিলে বৃাই - ব্যর্থ করলে। অর্থাৎ কবি-ভক্তের অনুযোগ-বসন্তকে কবি বরণ না করায় বসন্তের আবেদন গুরুত্ব হারিয়েছে।

    পুষ্পারতি - ফুলেল বন্দনা বা নিবেদন।

    পুষ্পারতি লভে নি কি ঋতুর রাজন? - ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ ও বন্দনা করার জন্য গাছে গাছে ফুল ফোটেনি? অর্থাৎ বসন্তকে সাদর অভ্যর্থনা জানানোর জন্যেই যেন ফুল ফোটে।

    মাধবী - বাসন্তী লতা বা তার ফুল।

    অর্ঘ্য বিরচন - অঞ্জলি বা উপহার রচনা। প্রকৃতি বিচিত্র সাজে সজ্জিত হয়ে ফুল ও তার সৌরভ উপহার দিয়ে বসন্তকে বরণ করে।

    উপেক্ষায় ঋতুরাজে কেন কবি দাও তুমি ব্যথা - কবিভক্ত বুঝতে পারছেন না, কবি যথারীতি সানন্দে বসন্ত বন্দনা না করে তার দিকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন কেন।

    কুহেলি - কুয়াশা।         

     উত্তরী - চাদর। উত্তরীয়।

    কুহেলি উত্তরী তলে মাঘের সন্ন্যাসী - কবি শীতকে মাঘের সন্ন্যাসীরূপে কল্পনা করেছেন। যে সন্ন্যাসী কুয়াশার চাদর পরিধান করে আছে।

    পুষ্পশূন্য দিগন্তের পথে - শীত প্রকৃতিতে দেয় রিক্ততার রূপ। গাছের পাতা যায় ঝরে। গাছ হয় ফুলহীন। শীতের এ রূপকে বসন্তের বিপরীতে স্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতি বসন্তের আগমনে ফুলের সাজে সাজলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ততার ছবি। শীত যেন সর্বরিক্ত সন্ন্যাসীর মতো কুয়াশার চাদর গায়ে পত্রপুষ্পহীন দিগন্তের পথে চলে গেছে।

    তাহারেই পড়ে মনে - প্রকৃতিতে বসন্ত এলেও কবির মন জুড়ে আছে শীতের রিক্ত ও বিষণ্ন ছবি। কবির মন দুঃখ ভারাক্রান্ত। তার কণ্ঠ নীরব। শীতের করুণ বিদায়কে তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না। তাই বসন্ত তার মনে কোনো সাড়া জাগাতে পারছে না। বসন্তের সৌন্দর্য তার কাছে অর্থহীন, মনে কোনো আবেদন জানাতে পারছে না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাঁর প্রম স্বামী ও কাব্যসাধনার প্রেরণা-পুরুষের আকস্মিক মৃত্যুতে কবির অন্তরে যে বিষণ্নতা জাগে তারই সুস্পষ্ট প্রভাব ও ইঙ্গিত এ কবিতায় ফুটে উঠেছে।

পাঠ-পরিচিতি
তাহারেই পড়ে মনেকবিতাটি ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে মাসিক মোহাম্মদীপত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। এ কবিতায় প্রকৃতি ও মানবমনের সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তাৎপর্যময় অভিব্যক্তি পেয়েছে। সাধারণভাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য মানবমনের অফুরন্ত আনন্দের উৎস। বসন্ত-প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যে কবিমনে আনন্দের শিহরণ জাগাবে এবং তিনি তাকে ভাবে ছন্দে সুরে ফুটিয়ে তুলবেন সেটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু কবিমন যদি কোনো কারণে
শোকাচ্ছন্ন কিংবা বেদনা-ভারাতুর থাকে তবে বসন্ত তার সমস্ত সৌন্দর্য সত্ত্বেও কবির অন্তরকে স্পর্শ করতে পারবে না। এ কবিতায় কবির ব্যক্তিজীবনের দুঃখময় ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে। তাঁর সাহিত্য সাধনার প্রধান সহায়ক ও উৎসাহদাতা স্বামী সৈয়দ নেহাল হোসেনের আকস্মিক মৃত্যুতে (১৯৩২) কবির জীবনে প্রচ শূন্যতা নেমে আসে। তাঁর ব্যক্তিজীবন ও কাব্যসাধনার ক্ষেত্রে নেমে আসে এক দুঃসহ বিষণড়বতা। কবিমন আচ্ছনড়ব হয়ে যায় রিক্ততার
হাহাকারে। তাহারেই পড়ে মনেকবিতাকে আচ্ছনড়ব করে আছে এই বিষাদময় রিক্ততার সুর। তাই বসন্ত এলেও উদাসীন কবির অন্তর জুড়ে রিক্ত শীতের করুণ বিদায়ের বেদনা। কবিতাটির আরেকটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর নাটকীয়তা। গঠনরীতির দিক থেকে এটি সংলাপনির্ভর রচনা। কবিতার আবেগময় ভাববস্তুর বেদনাঘন বিষণ্নতা সুর এবং সুললিত ছন্দ এতই মাধুর্যমতি যে তা সহজেই পাঠকের অন্তর ছুঁয়ে যায়।

বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. উত্তরীশব্দের অর্থ কী?
ক. চাদর        খ. কুয়াশা
গ. সমীর ঘ. উত্তর দিক
২. কহিল সে সিগ্ধ আঁখি তুলি’-চরণটিতে ‘¯স্নিগ্ধ আঁখিবলতে বোঝায়-
ক. মায়াবী দৃষ্টি            খ. কোমল নেত্র
গ. অশ্রুসিক্ত নয়ন          ঘ. উৎসুক চাহনি 

০১. “Song offerings' গ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কার পান কে?  
        [জাহা: বিশ্ব: ‘C' শিফট-৫ ২০২২-২৩].
       উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 
০২. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ব্যবহৃত ‘পুষ্পারতি’ শব্দটি কভিাগে গঠিত হয়েছে? 
         [ঢাবি ‘ঘ’ ২০১৩-১৪]
        উত্তর- সন্ধিযোগে। 
০৩. ‘তাহারেই পড়ে মনে’ কবিতায় ‘অলখের পাথার’ বলতে প্রকৃতপক্ষে বোঝানো হয়েছে- [GST ‘A’ 2023-24]  উত্তর: সীমাহীন সমুদ্র। 

পদ্মা  [ফররুখ আহমদ]

০১. ফররুখ আহমদের ‘পদ্মা’ কবিতাটি ‘কাফেলা’ (১৯৮০) নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত এই কাফেলা কাব্যটি কতটি সনেটের সমন্বয়ে রচিত?
উত্তর: সাতটি। 
০২. 


০১. ‘তালাক’ কোন ভাষার শব্দ?  [চবি ‘B’ ২০১৩-১৪]
        উত্তর- ফারসি। 
০৭. ‘বীরবল’ ছন্দনামে কে লিখতেন? [চবি ‘B’ ২০১৩-১৪]
        উত্তর- প্রমথ চৌধুরী। 
০৮. ‘ভানুসিংহ ঠাকুর’ কার ছদ্মনাম? [চবি ‘B’ ২০১৩-১৪]
        উত্তর- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। 

আঠারো বছর বয়স [সুুকান্ত ভট্টাচার্য]

০১. কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়েছিল কত বছর বয়সে? [চবি ‘B-1’ ২০১৩-১৪]
   উত্তর- একুশ বছর বয়সে। 

ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ [শামসুর রাহমান]

কবি-পরিচিতি
শামসুর রাহমান ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩এ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর পাড়াতলি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মাতার নাম আমেনা খাতুন। তিনি ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে প্রবেশিকা, ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক মর্নিং নিউজ’-এ সাংবাদিকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দৈনিক পাকিস্তান’ (পরে দৈনিক বাংলা’) পত্রিকায় যোগদান করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক সোনার বাংলাপত্রিকায় কবির প্রম কবিতা প্রকাশিত হয়। আজীবন তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাব্যসাধনায় নিয়োজিত ছিলেন; তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের পক্ষে, ছিলেন সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পক্ষে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধ ও পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন তাঁর কবিতাকে করেছে অনন্য
বৈশিষ্ট্যম-িত। নগর জীবনের যন্ত্রণা, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ইত্যাদি তাঁর কবিতার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য।
শামসুর রাহমানের উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ : প্রম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’, ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, নিরালোকে দিব্যরথ’, ‘নিজ বাসভূমে’, ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা’, ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’, ‘বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়ইত্যাদি। এছাড়া গল্প-উপন্যাস, শিশু সাহিত্য ও অনুবাদ কর্মেও তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তিনি আদমজি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে
কেমন নিবিড় হয়ে। কখনো মিছিলে কখনো-বা
একা হেঁটে যেতে যেতে মনে হয়-ফুল নয়, ওরা
শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ, স্মৃতিগন্ধে ভরপুর।
একুশের কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনারই রং।
এ -রঙের বিপরীত আছে অন্য রং,
যে-রং লাগে না ভালো চোখে, যে-রং সন্ত্রাস আনে
প্রাত্যহিকতায় আমাদের মনে সকাল-সন্ধ্যায়-
এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট, সারা দেশ
ঘাতকের অশুভ আস্তানা।
আমি আর আমার মতোই বহু লোক
রাত্রি-দিন ভূলুণ্ঠিত ঘাতকের আস্তানায়, কেউ মরা, আধমরা কেউ,
কেউ বা ভীষণ জেদি, দারুণ বিপ্লবে ফেটে পড়া। চতুর্দিকে
মানবিক বাগান, কমলবন হচ্ছে তছনছ।
বুঝি তাই উনিশশো উনসত্তরেও
আবার সালাম নামে রাজপথে, শূন্যে তোলে ফ্ল্যাগ,
বরকত বুক পাতে ঘাতকের থাবার সম্মুখে।
সালামের চোখ আজ আলোচিত ঢাকা,
সালামের মুখ আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা।
দেখলাম রাজপথে, দেখলাম আমরা সবাই
জনসাধারণ
দেখলাম সালামের হাত থেকে নক্ষত্রের মতো
ঝরে অবিরত অবিনাশী বর্ণমালা
আর বরকত বলে গাঢ় উচ্চারণে
এখনো বীরের রক্তে দুঃখিনী মাতার অশ্রুজলে
ফোটে ফুল বাস্তবের বিশাল চত্বরে
হৃদয়ের হরিৎ উপত্যকায়। সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ,
শিহরিত ক্ষণে ক্ষণে আনন্দের রৌদ্রে আর দুঃখের ছায়ায়। [সংক্ষেপিত]

শব্দার্থ ও টীকা
📘আবার ফুটেছে দ্যাখো ... আমাদের চেতনারই রং - প্রতি বছর শহরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। কবির মনে হয় যেন ভাষা-শহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। তাই একুশের কৃষ্ণচূড়াকে কবি আমাদের চেতনার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চান। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন, জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের ত্যাগ আর মহিমা যেন মূর্ত হয়ে ওঠে থরে থরে ফুটে থাকা লাল কৃষ্ণচূড়ার স্তবকে-স্তবকে।

📘    মানবিক বাগান - মানবীয় জগৎ। মনুষ্যত্ব, ন্যায় ও মঙ্গলের জগৎ।

📘    কমলবন - পদ্মবন। কবি মানবিকতা, সুন্দর ও কল্যাণের জগৎ বোঝাতে কমলবন
প্রতীকটি ব্যবহার করেছেন।

📘  বুঝি তাই উনিশশো ... থাবার সম্মুখে। - ১৯৫২ সালের ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের μমধারায় ছাত্র-অসন্তোষকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলন উনিশশো উনসত্তরে ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। শহর ও গ্রামের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এই আন্দোলনে
অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ছয় দফা ও ছাত্রদের ১১ দফার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন ছিল অপ্রতিরোধ্য। এই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন আসাদুজ্জামান, মতিউরড. শামসুজ্জোহা প্রমুখ। এ অংশে কবি শোষণ আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও আত্মাহুতি দেওয়া বীর জনতাকে ভাষা-শহিদ সালাম ও বরকতের প্রতীকে তাৎপর্যময় করে তুলেছেন।
সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ - ফুল বলতে এখানে বাংলা ভাষা বোঝানো হয়েছে।

পাঠ-পরিচিতি
ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯শীর্ষক কবিতাটি কবি শামসুর রাহমানের নিজ বাসভূমেকাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯দেশপ্রেম, গণজাগরণ ও সংগ্রামী চেতনার কবিতা।
১৯৬৯-এ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে যে গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, কবিতাটি সেই গণজাগরণের পটভূমিতে রচিত। জাতিগত শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এদেশের সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ১৯৬৯-এ। প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ, হাটবাজার, কলকারখানা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অসংখ্য মানুষ জড়ো হয় ঢাকার রাজপথে। শামসুর রাহমান বিচিত্র শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সংগ্রামী চেতনার অসাধারণ এক শিল্পভাষ্য রচনা করেছেন এই কবিতায়।
কবিতাটিতে দেশমাতৃকার প্রতি জনতার বিপুল ভালোবাসা সংবর্ধিত হয়েছে। দেশকে ভালোবেসে মানুষের আত্মদান ও আত্মাহুতির প্রেরণাকে কবি গভীর মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে মূর্ত করে তুলেছেন। কবিতাটি একুশের রক্তঝরা দিনগুলোতে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এদেশের সংগ্রামী মানুষের আত্মাহুতির মাহাত্ম্যে প্রগাঢ়তা লাভ করেছে। গদ্যছন্দ ও প্রবহমান ভাষার সুষ্ঠু বিকাশে কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন।
বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
১. ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯কবিতায় বর্ণমালাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
    ক. নক্ষত্র         খ. রক্ত        গ. ফুল         ঘ. রৌদ্র
২. আবার ফুটেছে দ্যাখো কৃষ্ণচূড়া থরে থরে শহরের পথে চরণটি আমাদের জাতীয়         জীবনের কোন দিকটি তুলে ধরে?
    ক. গণআন্দোলন                 খ. ভাষা আন্দোলন
    গ. স্বাধীনতা আন্দোলন         ঘ. স্বদেশি আন্দোলন
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশেড়বর উত্তর দাও।
১৯৭১ সালে মাতৃভূমির মুক্তির জন্য অকাতরে জীবন বিসর্জন দেন মতিউর রহমান, মোস্তফা কামালমহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরসহ লক্ষ লক্ষ মানুষ। তাঁদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ।
৩. উদ্দীপকের ত্যাগী মানুষদের প্রতিচ্ছবি ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯কবিতায় যাদের নির্দেশ করে তারা হলেন
র. সালাম
রর. বরকত
ররর. দুঃখিনী মাতা
কোনটি ঠিক?
ক. র ও রর খ. র ও ররর
গ. রর ও ররর ঘ. র, রর ও ররর
৪. ওই ব্যক্তিদের আত্মত্যাগের মূলমন্ত্র কী ছিল?
ক. আদর্শ খ. দেশপ্রেম
গ. বিদ্রোহ ঘ. স্বাধিকার
সৃজনশীল প্রশড়ব
কপালে কব্জিতে লাল সালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক,
লাঙল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক
হাতের মুঠোয় মৃত্যু চোখে স্বপড়ব নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত,
নি¤ড়ববিত্ত, করুণ কেরানি, নারী, বৃদ্ধ, ভবঘুরে
আর তোমাদের মত শিশু পাতা কুড়ানিরা দল বেঁধে।
ক. শহরের পথে থরে থরে কী ফুটেছে ?
খ. এ-রঙের বিপরীত আছে অন্য রংবলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটি ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯কবিতার যে সাদৃশ্য নির্দেশ করে তার পরিচয় দাও।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯কবিতার খ-াংশ’- যৌক্তিকতা দেখাও।

০১. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় বর্ণ মালাকে কিসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছ?  [রাবি A Group-2’ ২০২০-২১]
        উত্তর- নক্ষত্র
০২. ‘ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯’ কবিতায় গণ অভ্যুত্থাানে অংশগ্রহণকারী বীর জনতার বীরত্বে কোন কোন শহিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে? [খুবি ‘B’ ২০১৯-২০]
       উত্তর: সালাম ও বরকত। 
০৩. 

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি [আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ]

০১. ‘কিংবদন্তি’ শব্দের অর্থ- [রাবি A Group-2’ ২০২০-২১]
        উত্তর- জনশ্রুতি।
০২. আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতায় ‘কিংবদন্তি’ কিসের প্রতীক?  [GST ‘A’ 2023-24]
       উত্তর: ঐতিহ্যের। 
০৩. 

নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায় [সৈয়দ শামসুল হক]

০১. নুরুলদীনের ডাকে কত বঙ্গাব্দে বাংলার মানুষ জেগে উঠেছিল? [GST ‘C’ ২০২০-২১]
    উত্তর: ১১৮৯ বঙ্গাব্দে। 
০২. ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার পটভূমি কী?  [খুবি ‘B’ ২০১৯-২০]
        উত্তর: কৃষক বিদ্রোহ। 
০৩. 

ছবি [আবুু হেনা মোস্তফা কামাল]

০১. 



No comments:

Post a Comment

BCS & All Jobs Math

  বিসিএস ও অন্যান্য সকল চাকুরী পরীক্ষার জন্য 100% গণিত প্রিপারেশন এর জন্য আমাদের সাথে থাকুন:  01736960513  নন-ক্যাডার লিখিত গণিত:   01. যুদ্...